মীযান মুহাম্মদ হাসান
বর্তমান সময়ের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম একটি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী হলো মুঠোফোন। এর উপকারীতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে বলে বোঝানোরও কিছু নেই। তবে এটির ব্যবহার এমন কোনো বিষয় নয় যে, শিশুদের হাতেও এটি তুলে দিতে হবে! কিংবা এটা কোনো খেলনা সামগ্রীও নয়। কিন্তু এর পরও আমরা অভিভাবকরা শিশুদের হাতে এটি তুলে দিতে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ করছি না। অনেকেই প্রিয় শিশু সন্তানের হাতে মুঠোফোন তুলে দিয়ে নিজেরা নিজেদের কাজে সময় ব্যয় করছি। সন্তানের খেলাধূলা ও সুস্থ বিনোদেনের জন্য এর থেকে সস্তা ও সহজলভ্য আর কিছুই যেন নেই আমাদের কাছে। তবে এই শিশু বয়সেই তার মনে যে মুঠোফোনের প্রতি আসক্তি তৈরি হচ্ছে। তা নিয়ে আমরা একটুও ভেবেছি কি? আমি এমন কিছু শিশুর দেখা পেয়েছি, যারা মুঠেফোন ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চায় না। তাও আবার স্মার্টফোন। শিশুকালেই যেসব বাচ্চাদের মন মগজে মুঠোফোন আসক্তি গেঁথে যায়। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কি একটু ভেবে দেখেছি? এই মুঠোফোন আসক্তির কারণেই নিয়মিত খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম এসবের প্রতিও আজ কিশোর-তরুণদের অনীহা বা বিরক্তবোধ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তারা মুঠোফোন দিয়ে কি করছে? কী কাজ তাদের? তাও আমাদের অভিভাবকদের না জানার কথা নয়! সারাদিন সারাক্ষণ ফ্রি ফায়ার, পাবজি ইত্যাদি গেম খেলে সময় কাটাচ্ছে আমাদের শিশুরা।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি শিশুকে মুঠোফোন না দেওয়ার কারণে; সে তার মাকে মারতে উদ্যত হয়েছে। কি ভয়ংকর চিত্র। কল্পনা করা যায় এসব? অনলাইন ক্লাস কিশোর-তরুণদেরকে কাছে টানতে না পারলেও অন্যসব চিত্তাকর্ষক বিনোদনগুলো তাদেরকে ঠিকই নেশাগ্রস্ত করে ফেলেছে। ইদানীং টিকটক নামে তরুণ প্রজন্ম যেন আরও বেপরোয়া উঠছে ক্রমশই। এ ছাড়া রাত জেগে ফেসবুক-ইউটিউবে ডুবে থাকা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই বর্তমানে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের অমনোযোগিতা আরো বেড়ে চলছে। দৈনিক প্রথম আলো দু বছর আগে একটি প্রতিবেদন করেছিল। তারা বলছেÑ দেশের তরুণ-তরুণীদের এক তৃতীয়াংশই কোনো কাজ করে না। আবার পড়াশোনাও করে না। ১৫-২৯ বছর বয়সী ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ-তরুণীর অবস্থা এমন যে, যারা কাজও করে না। পড়াশোনাও করে না। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ০৪.০২.১৯ - প্রথম আলো
তবে বর্তমানে এই করোনাকলীন আমাদের তরুণ প্রজন্মের অবস্থা একটু ভেবে দেখি। সাম্প্রতিক জরিপ যে আরও ভয়াবহ হবে তা বলাই বাহুল্য। তা ছাড়া ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার এবং এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধির জন্যও দায়ী। তো এই লকডাউন সময়টাতে যদি আমরা একজন সচেতন অভিভাবক হিসাবে আমাদের সন্তানদের খোঁজ-খবর না রাখি। শুধু মুঠোফোন নিয়ে পড়ে থাকতে সুযোগ করে দিই। আর খেলাধূলা, অবসরে বই পড়া, নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির জন্য ধর্ম চর্চা করা ইত্যাদির সঙ্গে যদি যুক্ত না করি সন্তাদেরকে এবং তাদের পড়ালেখার প্রতি যতœশীল না হই, তবে কী হবে এদের ভবিষ্যৎ?
আমরা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ ধনী বিল গেটসের নাম তো সবাই জানি। তার কি টাকা পয়সা অর্থের অভাব? তিনি তো ১৪ বছর বয়েসের আগে তার সন্তানের হাতে মুঠোফোন তুলে দেননি। তবে আমরা কেন আদরের সন্তানকে শিশু বয়সেই মুঠোফোন তুলে দিয়ে নিজেদের অজান্তেই তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি? বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট নাক,কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেনÑ ১৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের হাতে মুঠোফোন দেওয়া উচিত নয়! তাই আসুন আমরা নিজেরাও মুঠোফোনের আসক্তি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুন্দর ওউজ্জ্বল করতে একজন সচেতন অভিভাবক হিসাবে সঠিক দায়িত্ব পালন করি। মুঠেফোনের সঠিক ব্যবহারে পরিণত বয়সকে নির্বাচন করি। এর পর সন্তানের হাতে মুঠোফোন দিই। সব শেষে কামনা করি, উজ্জ্বল হোক প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ!
লেখক : লেখক ও সাংবাদিক