কাবুল এয়ারপোর্ট ইস্যুতে তালেবান-তুরষ্ক সংঘাত কি আসন্ন?

img

সরোয়ার আলম : 
কোন সমুদ্র বন্দর না থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের সাথে বৈশ্বিক যোগাযোগের একমাত্র সহজ মাধ্যম কাবুল এয়ারপোর্ট।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো সৈন্য আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর এই বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে তুরষ্কের শরণাপন্ন হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের পর অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আঙ্কারা।তবে আফগান তালিবানের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে যেন ন্যাটোর সেনাবাহিনীর সাথে তুর্কী বাহিনীও আফগান ত্যাগ করে।অন্যথায় বহিরাগত সৈন্যরা তাদের ওপেন টার্গেটে পরিণত হবে।
তালিবানের হুমকির পর সর্ব মহলে আলোচনা হচ্ছে তাহলে কি তুরষ্ক-তালিবান সংঘাত আসন্ন?
এখানে বলে রাখা উচিৎ, বিমান বন্দরের দায়িত্ব নিতে তুরষ্কের আগ্রহ প্রকাশের অর্থ এই নয় যে তারা অলরেডি দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে।
বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটকে খুব বড় কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে তুরষ্ক।
১)তুরষ্ককে লজিস্টিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সহায়তা দিতে হবে।
২) তুরষ্ক এই দায়িত্ব পালনের জন্য পাকিস্তান ও হাঙ্গেরিকে সাথে রাখবে এবং ন্যাটো জোটকে তা মেনে নিতে হবে।
এছাড়াও আছে কিছু অলিখিত তথা গোপন শর্ত
যেমন, এস ৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইস্যুতে তুরষ্কের উপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং এফ ৩৫ যুদ্ধবিমান প্রজেক্টে পুনরায় তুরষ্ককে অন্তর্ভুক্ত করা।
তুরষ্ক বহুবছর ধরেই কিন্তু আফগানিস্তানের সরকার এবং তালিবানের সাথে ব্যালেন্সিং সম্পর্ক বজায় রেখেছে।দুই পক্ষের উপরই যথেষ্ট প্রভাব আছে তুর্কী সরকারের।তবে বিমানবন্দর ইস্যুতে এরদোয়ান যে ডিপ্লোমেটিক গেইমটি খেলেছেন তা হলো পাকিস্তান!
ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে যে সরকার গঠিত হবে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে তালিবান।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথেই তালিবানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
তালিবানকে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে বিগত কয়েকবছরে পশ্চিমা আক্রোশের মুখে পড়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাকিস্তান।তারপরও তালিবানের পাশে ছিল পাকিস্তান। তাই ভবিষ্যতের তালিবান সরকার গঠিত হলে তা মূলত পাকিস্তানের স্বার্থেই ব্যবহৃত হবে।আর পাকিস্তান চাই না এই স্বার্থে ন্যাটো অথবা অন্য কেউ ভাগ বসাবে।
আবার অন্যদিকে তুরষ্কের সাথে পাকিস্তানকে রাখার প্রস্তাবটি ন্যাটো মেনে নিবে কি-না তা এখনো ভবিষ্যতের বিষয়।তারা সহজেই এই প্রস্তাব মেনে নিবে বলে মনে হয় না।কেননা চিন,রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ তারা।
সুতরাং রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের এই সমীকরণ অনেক কঠিন!
পুরোটা নির্ভর করবে তুরষ্ক কতোটা ন্যাটোকে চাপ দিতে পারে এবং পাকিস্তানকে কনভিন্স করতে পারে এই দরকষাকষির উপর।
কারণ, তালিবান তুরষ্ককে এখন হুমকি দিলেও যদি পাকিস্তান তাদের মেনে নেয় তাহলে তালিবানও মেনে নিতে বাধ্য হবে।
* এছাড়াও আফগান নিয়ে থাকতে পারে তুরষ্কের অন্য কোন প্ল্যান!
* তুরষ্ক চায় আমেরিকা প্রস্থান পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে যেন সংঘাত ও সহিংসতা নিরসন হয়।কেননা সেখানে সশস্ত্র গ্রুপ গুলোর মধ্যে সহিংসতা বেড়েই চলেছে।তালেবান ছাড়াও সেখানে ইরান,সৌদি আরব,ভারত সমর্থিত অনেক সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। সুতরাং আফগানিস্তানে রাতারাতি শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
*সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গভীর করার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আঙ্কারা সেই কাজে ব্যবহার করতে পারে আফগানিস্তানকে। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেখানে তুরষ্কের সামরিক ঘাঁটি তুর্কী পরিকল্পনাকে আরো মজবুত করবে।

ফেসবুক থেকে কপি
* তুরষ্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির চিফ রিপোর্টার।