সহিহ ইলম ছাড়া ঈমানও গ্রাহ্যতা পায় না। কারণ, ঈমান ইলমের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষত এ উপমহাদেশে কওমি মাদরাসার অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯০% মসজিদ কওমিদের দখলে। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রয়োজনে কওমিয়ানদের আরও বিভিন্ন বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
১. পরামর্শ করে চলা উচিত। পরামর্শ দ্বারা বিভিন্ন পথ উন্মুক্ত হয়। তবে সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয়।
২. তালিমি মুরুব্বি থাকা আবশ্যক। পরিবারের বড় কেউ থাকলে অনেক ভালো। নয়তো তোমার অবস্থা সম্পর্কে যে উস্তাদ বা বড় ভাই বেশি অবগত-- এমন কাউকে মুরুব্বি বানানো।
৩. আধুনিক আরবিভাষা শেখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। সবচেয়ে ভালো হয় মাদানী নেসাবে তিন চার বছর পড়া। আরবির সাথে মোটামুটি ইংরেজি শেখা। বাংলাও মোটামুটি শেখা আবশ্যক। আর যাদের বাংলা লেখার প্রতি ঝোক ও আগ্রহ রয়েছে, তারা আস্তে আস্তে সাহিত্য সাধনায় নিমগ্ন হবে।
৪. ফিকহের প্রাচীন কিতাবের পাশাপাশি আধুনিক ফিকহের কিতাবাদি পড়বে। বিশেষত মাওলানা তাকি উসমানী, মাও. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী, ড. ইউসুফ কারযাবী এবং ফিকহ একাডেমী জেদ্দা ও ফিকহ একাডেমী ইন্ডিয়ার কিতাব পড়া উচিত।
৫. সম্ভব হলে কওমির পাশাপাশি আলিম পাশ করবে। আলিম হল সাত রাস্তার মোড়। সেখান থেকে অনেক জায়গায় যাওয়া সম্ভব। এরপর সুযোগ ও তাওফিক হলে দেশবিদেশের ভার্সিটিতে সুযোগ পাবে। ভার্সিটিতে না গেলেও সমস্যা নেই। অন্তত সমাজে শিক্ষিত মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আলিম না হলেও দাখিল পর্যন্ত সবারই পড়া উচিত। শরহেবেকায়ার পর বা আগে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ফেলা উচিত। একটা ড্রাইভার হতে গেলেও মেট্রিক পাশের সার্টিফিকেট চায়। সবাই তো দাওরা পর্যন্ত যেতে পারবে না। তারা যেন একটাকিছু করতে পারে।
৬. মেধাবীদের উচিত পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া। এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা করবে।
৭. আলিমের পর আইন ও সাংবাদিকতা পড়ার দিকে কিছু মেধাবীদের চলে যাওয়া দরকার। ইফতার সাথে প্রচলিত আইন জানা আবশ্যক। আইন পড়লেই যে চর্চা করতে হবে এমন না। তা ছাড়া রাজনীতির সাথে আইনের বিরাট সম্পর্ক। লীগ ও বিএনপির অর্ধেক এমপি এডভোকেট বা ব্যারিস্টার। ইসলামী রাজনীতি যারা করবে তাদের জন্য আইন নিয়ে পড়া জরুরি। যেমন লেখালেখির যোগ্যতার সাথে সাংবাদিকতার সনদ থাকা প্রয়োজন। তাহলে জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় সগর্বে পদচারণ করা সহজ।
৮. কওমি সিলেবাস অতি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। হাফেজ না হলে ১৮/১৯ বছরের ছেলেরা দাওরা (মাস্টার্স) পাশ করছে। ১/২ বছর ইফতা পড়েই শিক্ষকতা শুরু। আমার মনে হয় দাওরা পর্যন্ত আরও কয়েকবছর বাড়ানো উচিত। আর দাওরার পর কোনো একটি বিষয়ে ৩/৪ বছর গবেষামূলক উচ্চতর পড়াশোনা করার পর ২৮/৩০ বছর হতে শিক্ষকতা শুরু করা যেতে পারে। ১৮/১৯ বছরে শিক্ষকতায় নামা অনুচিত।
৯. কওমি মাদরাসায় পড়লেই মাদরাসায় পড়ানো জরুরি না। আগ্রহ থাকলে ব্যবসাবাণিজ্যে আসতে পারে। ইমাম আবু হানিফা রহ. একজন মুজতাহিদ ইমাম হওয়া সত্ত্বেও যুগের নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন। ছিলেন বড় দানশীল।
১০. মাদরাসায় পড়ার সাথে সাথে এ দেশ ও বিশ্ব সম্পর্কে জানা উচিত। একটি গণ্ডিতে বসে থাকলে হবে না। সুযোগ থাকলে তাবলীগে যাওয়া যায়। সামর্থ্য থাকলে বিদেশ সফর করা। বিভিন্ন জেলায় সফর করা। এদেশ আমাদের জন্মভূমি, এদেশই আমাদের কবরস্থান। এদেশের জনগণই আমাদের কর্মক্ষেত্র।
১১. মানুষ অনুসরণ করতে পছন্দ করে। আমাদের পূর্বসূরি সকল ইমামই অনুসরণীয়। সবার অনুসরণ করা একটু দুষ্কর। আমি কেবল দুজনের নাম বলছি। তাদের অনুসরণ করাই যথেষ্ট। মাওলানা সাইয়েদ আলী মিয়া নদভী রহ. এবং মাওলানা তাকী উসমানী।
আর আমাদের দেশের দুজনের নাম বলছি। মাওলানা আবদুল মালেক। মাওলানা মামুনুল হক। আরেকটা নাম নিতে পারো। মাওলানা খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.। তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করো। তাদের রচনাবলি তোমার আলোর দিশারী হবে। হবে পাথেয়।