ইসলামি মিডিয়া এবং বরকতি সমালোচনা

img

কী এক অদৃশ্য কারণে থমকে আছে কলম। কলম বললে ভুল হবে, কী-বোর্ড শ্লথ হয়ে আছে। কারণ, অদৃশ্য।
.
কত শত ইস্যু আসে আর যায়, সবাই লিখেন। প্রতিদিন। প্রতিনিয়ত। পক্ষে কিবা বিপক্ষে। অথবা দরমিয়াঁনী পন্থায়।
আমি সেসব পড়ি, শুয়ে, বসে অথবা হাটতে হাটতে। মনে মনে অথবা আনমনে। ভাবি। শিহরিত হই। উদ্বেলিত হই। আশপাশ চারপাশ তাকাই এবং আবারো ভাবিত হই।
এতো সুন্দর, চমৎকার লেখা তারা কীভাবে লেখেন। ক্যামতে কী- আমার মাথায় ধরেনা। লিখতে পারিনা তো, তাই।
.
এই না লেখার পেছনে অবশ্য যৌক্তিক কারণও আছে। কওম-কওমির মুখপত্র কওমিকণ্ঠ অনলাইন পোর্টালটির সাথে এই আমি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। কওমিকণ্ঠের খেদমত করে যাচ্ছি। সম্ভাবনাময় কওমির স্বপ্নীল আগামির স্বপ্ন দেখে।
অনেকেই জানেন বিষয়টা। কওমিকণ্ঠের ভালো-মন্দের ভার্চুয়ালি দায়ভার খুব দ্রুতই চলে আসে আমার দিকে।
এই এক কারণে এখন আমি নিজেকে বন্দী ভাবি। ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করতে গেলেই সেটার আছর কওমিকণ্ঠের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে। তাই আপাতত যা লিখি, টুকটাক, ফেসবুকীয় সক্রিয়তা বজায় রাখার স্বার্থে।
.
একসময়, আজ থেকে বছর দুয়েক আগেও প্রায় স্টাটাসে পাঁচ শতাধিক লাইক আর শ'খানেক কমেন্ট থাকত। আজ সেটা টেনেটুনে একশো হয়। আগের মত এখানে সময়ও দিতে পারিনা। এ নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। তবে হতাশা আছে।
অনেকেই হয়ত এই ফেসবুকের কারণে লেখালেখিতে সক্রিয় হয়েছেন, ইচ্ছেমত হাত ঝালাই করেছেন, নিয়মিত হয়েছেন- ঢের ফায়দা হয়েছে তাদের। এটা ফেসবুকের ভালো দিকগুলোর একটি। আমার ক্ষেত্রে ফেসবুকীয় ফায়দাটা শুধু বন্ধুত্বের পরিধি বিস্তৃত করেছে। জানা, অজানা বিজ্ঞজনদের কাছে আসার সুযোগ হয়েছ। ব্যস; এটুকুই। নিজের সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষেত্রে এই ফেসবুক আমার চূড়ান্ত সর্বনাশ করেছে বলা যায়। বিশেষত লেখালেখির মাদ্দাটা একেবারে কেড়ে নিয়েছে। বই পাঠেও ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। অবসর সময়টা এখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফেসবুকে দিতে হয়।
.
যাক সে কথা, ফেসবুক এই আমার লাভের তুলনায় ক্ষতিই করেছে বেশ। শুধু আমার না, আমার মত আরো অনেকের।
যারা একসময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখত, সেই তারাই এখন হাই-হ্যালোতে সীমাবদ্ধ।
.
একটা কথা না লিখে পারছিনা। চলমান কয়েকটি ইস্যুর মাঝে হালের কওমিপাড়ায় আলোচিত একটি ইস্যু হচ্ছে- অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম। কম সময়ে জনপ্রিয় অনলাইন এই পোর্টালটি কয়েকজন কওমি দরদি আলেমের স্বপ্নবাড়ি। কওমি অঙ্গনে মিডিয়ার অপ্রতুলতা বুঝতে পেরে, নিজেরা মিডিয়ামুখি হওয়ার কারণে এমন একটা মহৎ উদ্যেগ নিয়েছেন। বাস্তবায়নও করেছেন। পোর্টালটির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত দু'জনের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। তবে একজনের সাথে গাঢ় সম্পর্ক। তাদের সাথে যখন কথা বলি, আওয়ার ইসলাম, কওমিকণ্ঠ, ইনসাফ বা কওমি নিউজ সম্পর্কে আলোচনা উঠে, বুঝবার চেষ্টা করি- কী পরিমাণ দরদ নিয়ে, ঘাটের টাকা ব্যয় করে এমন স্বপ্ন দেখা যায়!
.
কওমি অঙ্গনে মিডিয়ার যে নেহায়ত জরুরত, সেটা সবাই বলেন। বলার ধরনটাও ব্যতিক্রম- প্রথম আলো, নয়াদিগন্ত, জনকণ্ঠ অথবা বারবার গালে চপেটাঘাত করা ইনকিলাবের পাতা উল্টাবেন আর নাকের উপর চশমা নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলবেন- আহ, যদি আমাদের এমন কোনো পত্রিকা থাকতো! ফ্রী পাঠকের যদিও অভাব ছিলনা।


এমন সব দীর্ঘশ্বাস নিয়েই কিন্তু এককালের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানসহ অন্যান্য ইসলামি পত্রিকা হারিয়ে গেছে।
কিন্তু এই তিনাদের মত কওমির দরদি আরেকজন স্বপ্ন দেখে এবং বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। এখন যখন পৃষ্টপোষকতার দরকার, পরামর্শ- সহযোগিতার দরকার, তখন তারা তো নিজ থেকে এগিয়ে আসবেনই না, আর যদি তাদের কাছে যাওয়া হয় এবং বলা হয়- জনাব! আমরা এমন একটি মহৎ কর্ম বাস্তবায়ন করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা দরকার। মিডিয়া দরদি ওই মুহতারাম তখন পেরেশানীতে পড়ে যান- না জানি ওরা কতটাকা চাঁদা চাইবার আইছে!
এটা বলবেন না যে, আমার এই প্রতিষ্ঠান, বন্ধুর এই প্রতিষ্ঠানের একটি বিজ্ঞাপন দেব আপনাদের। সাধ্যানুযায়ী আরো চেষ্টা করব। এভাবে তো এগিয়ে আসবেন না। 
.
বলছিলাম আওয়ার ইসলাম নিয়ে। পোর্টালটির বয়স মাত্র একবছর তিন দিন চলছে। দুধের শিশুর সমান বয়স। এই বয়সেও এগিয়েছে পোর্টালটি। সামনে বন্ধুর পথ। কতদূর যাবে, সেটা পাঠক-শুভাকাঙ্খিরাই নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- সেটা পত্রিকা সংশ্লিষ্টদের চিন্তা। আর মূলত: এই মনোভাবটাই হচ্ছে আমাদেের কিছু অতিশয় আবেগি বুদ্ধিজীবীর মানসিক বিকারতা। বরকতি সমালোচনায় তারা সবার শীর্ষে।
.
গত ১০ জুন ছিল আওয়ার ইসলামের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। জাতীয় প্রেসক্লাবে। এই অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান কামাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র উ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী এমপি, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, বেফাকের আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা মাহফুযুল হক, মাওলানা উবায়দুর ররlহমান খান নদভি, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম বুদ্ধিজীবী, লেখক-সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।


আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ দিতে হয়, এরকম জামে' মানে' একটি প্রাণবন্ত এবং ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্যে। এটা তাদের প্রাপ্য। এতো বড় একটা অনুষ্ঠান, কিছুটা ভুলত্রুটি তো থাকবেই। কই, অনুষ্ঠানের ভালো দিকগুলো নিয়ে তো এভাবে কেউ লিখতে দেখিনি। 


আমার জানা মতে, কওমি অঙ্গনের কোনো মিডিয়ার আহবানে এরকম কোনো অনুষ্ঠান এ যাবত অনুষ্ঠিত হয়নি।
এখন কথা হচ্ছে, ঐ অনুষ্ঠানে নাকি জনাব মুক্তাদির চৌধুরী এমপি তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যে বাংলার সিংহপুরুুষ মরহুম মুফতী আমিনী রাহ.'র শানে বেয়াদবিমূলক কিছু কথা বলেছেন। বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া বা মিথ্যা বলারর সুযোগ নেই। কাল ভার্চুয়ালী এ যুগে কিছুই গোপন রাখা সম্ভব নয়।


সেদিনকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজনের সূত্রে জানতে পারলাম, জনাব মুক্তাদির চৌধুরী যখন বিতর্কিত এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন হলজুড়ে একটা রব উঠে। পরিস্থিতি আঁচ করতে বক্তব্য দ্রুত শেষ করেন মুক্তাদির চৌধুরী। পরবর্তীতে উবায়দুর রহমান খান নদভি সাহেব তাঁর বক্তব্যে উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রতিবাদ জানান। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, তখনও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুক্তাদির চৌধুরী।


এভাবে পরবর্তী অন্যান্য বক্তারাও এর প্রতিবাদ করেন।এখন আমার কথা হল, সমস্যার নগদ সামাধান যেহেতু প্রায় হয়ে গেছে, সেখানে এই সামান্য বিষয় নিয়ে এতো ত্যানা প্যাচানোর হেতু কী? সমালোচনা যে কেউ করতেই পারে। এটা বাকস্বাধীনতা। তাই বলে জিঘাংসাবৃত্তি নিয়ে সমালোচনা, এটা কোন মস্তিস্কের কাজ। 


না, আমার বিশ্বাস, আওয়ার ইসলাম বা কোনো পত্রিকা কর্তৃপক্ষই আপনাদের এসব সমালোচনার ধার ধারবেনা। বরং সুযোগ পেলে পুরস্কৃত করবে। আমরা ধরে নেব, আওয়ার ইসলামও এসবের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, আপনার এসব সমালোচনা আওয়ার ইসলামসহ সব মিডিয়ারই দরকার আছে। পজিটিভলি যেহেতু নিচ্ছেন না, নেগেটিভ হলে তাতে মন্দ কী! প্রচার তো হচ্ছে।


মনে রাখা দরকার আছে, মক্কার কাফেররা যখন পেয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.কে পাগল [নাউযুবিল্লাহ] আখ্যা দিয়েছিল, হজ্বে আগন্তুকদের সংবংদটি জানিয়ে দেবার জন্যে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সতর্কবাহক নিয়োগ করেছিল এই বলে যে, বিদেশি যারা হজ করতে আসবে, তাদেরকে বলে দিও, মক্কায় মুহাম্মদ [সা.] নামে এক ব্যক্তি আছে, যে নিজেকে নবী বলে দাবী করে....। বাকিটা জানা আছে সবারই, তখন কী হয়েছিল! কাফেরদের এই বিরূপ প্রচারণাই নবী মুহাম্মদ সা.'র সাথী সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।
.
শেষ কথা, পারলে কিছু করুন। করে দেখান। সহযোগিতা করুন। বেফাঁস সমালোচনায় না গিয়ে প্রাইভেটভাবে আলোচনা করুন। সমাধান অবশ্যই হবে এবং আপনার সংশয়যুক্ত মনমানস সংশয়মুক্ত হবে- ইনশাহআল্লাহ।