ড. মোঃ ওসমান গণি
স্নায়ুযুদ্ধ পরিচয়
স্নায়ুযুদ্ধ হচ্ছে Intellectual War যার আরবী হচ্ছে الغزو الفكر আল গাযউল ফিকরী বা বুদ্ধি ও কৌশলের যুদ্ধ। পরিভাষায় বলা যায় স্নায়ুযুদ্ধ এমন যুদ্ধ যাতে সৈন্যবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। কোন ধরনের রক্তপাত হয় না।
অর্থাৎ এমন প্ল্যান ও পরিকল্পিত কাজ যা মানব জীবনে ব্যক্তিগত সামাজিক ও চারিত্রিক জীবনে প্রভাব ফেলে। এ কাজটি ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে মুসলিমদেরকে তাদের দীন থেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারে এবং মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট করে। তাদের সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করে। তাদের শক্তিকে দূর্বল করে তাদেরকে শাসন করে। চাই সেটি সরাসরি হোক অথবা সরাসরি না হোক, চাই সেটি রাজনৈতিকভাবে হোক অথবা অরাজনৈতিকভাবে হোক, চাই সেটি মিলেটারী দিয়ে হোক অথবা মিলেটারী দিয়ে না হোক। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় সংকঠ হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধ।
স্নায়ুযুদ্ধ কেন ?
* আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম।
* আকীদা হিসেবে ইসলামই শ্রেষ্ঠ।
* আদর্শ হিসেবে ইসলামই চির অনুসরনীয়।
* যতদিন আল-কুরআন পৃথিবীর বুকে অবশিষ্ট থাকবে ততদিন মুসলিমদেরকে ধোকা দেয়ার আশা করা ঠিক হবে না।
* অস্ত্র দিয়ে সরাসরি ইসলামের মুকাবেলা করার ক্ষমতা কোন জাতের নেই।
* যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমদের উপর বিজয়লাভ করা সম্ভব নয়।
* মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে অতীতে ও বর্তমানে ইয়াহুদী জাতি সবচেয়ে বড় চক্রান্ত করেছে। তাদের এই চক্রান্তের কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ।
* মেলেটারী ও অস্ত্রদিয়ে যুদ্ধের থেকে স্নায়ুযুদ্ধ হচ্ছে হাজার ও লক্ষগুণ বিপদজনক।
* স্বাধীনতা, প্রগতি ও যুগে চাহিদার নামে বর্তমান মুসলিম উম্মাহকে দূর্বল করা হচ্ছে এ স্নায়ুযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য।
* মুসলিম জাতিসত্তা ও দীনি ফিতরাত নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধের আঘাতের মূল লক্ষ্য।
* মুসলিম প্রজন্মকে অচল করে দেয়া হচ্ছে এ স্নায়ুযুদ্ধের আসল টার্গেট।
স্নায়ুযুদ্ধের উদ্দেশ্য প্রধাণত : দুটি।
প্রথম উদ্দেশ্য :
যাতে মুসলিমদের ঘরের বাহিরে ইসলামের প্রকৃত রূপ বা অবস্থা প্রসারিত হতে বাধা প্রদান করা। কারণ তারা ভাল করেই জানে যে, ইসলাম একটি আদর্শ ধর্ম। আল্লাহ তায়ালা বলেন : إن الدين عند الله الإسلام
অর্থ- নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম। (সূরা আল ইমরান ১৯)
এ ধর্মই মানব জাতিকে প্রকৃত পক্ষে বিভিন্ন চাপ ও নিষ্পেষণ থেকে মুক্ত করেছে।
মানব জাতিকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর গোলামে পরিণত করেছে।
১. তাই তারা প্রথম উদ্দেশ্য বাস্তবায়েনে ইসলামী শরিয়তের ব্যপারে বিভিন্ন মিথ্যা ছড়ায়। যেমন তারা বলে, ইসলাম অন্যান্য ধর্ম থেকে সংগৃহীত। কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাম্মাদ সা. এর ওপর নাজিল হয়নি ইত্যাদি। এর মাধ্যমে তারা ইসলাম অনুসারীদের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরানো। এই দীনের প্রভাব যেন তাদের অন্তরের ভিতর প্রবেশ করতে না পারে।
২. ইসলামী সমাজে মুসলিমদের ব্যক্তিগত দূর্বলতা বড় করে ধরে। ইসলামের ওপর নিক্ষেপ করে বলে এটাই হচ্ছে ইসলাম। আমরা দৃঢ়তার সাথে এটা অস্বীকার করি যে, মুসলিমদের ব্যর্থতা ও দূর্বলতার দায়ী ইসলাম নয়। মুসলিমদের অনুন্নত ও ব্যর্থতা তাদের ক্রটি। এটা ইসলামের ক্রটি নয়।
৩. তারা ইসলামকে এমনভাবে চিত্রায়িত করে যে, ইসলাম কঠোরতার ধর্ম ও ইসলাম খুন-খারাপির ধর্ম। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় তলোয়ার দিয়ে। ইসলামে অনুসারিরা হচ্ছে জংলী হিংস্ত্র। তাদের কোন দয়া-মায়া নেই। তারা চোরের হাত কেটে দেয়, যিনাকারীকে পাথর মেরে হত্যা করে ও হত্যাকারীকে শিরোচ্ছেদ করে।
৪. তারা এমনভাবে ইসলামের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে যে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রটিযুক্ত। যেমন তালাক, একাধিক স্ত্রী ইত্যাদি।
৫. তারা ইসলামে অপবাদ দেয় যে, ইসলাম তার অনুসারীদের মাঝে তাদের মেধা ও আবিস্কারের শক্তি অকার্যকর করে দেয়।
দ্বিতীয় উদ্দেশ্য
ইসলামকে তার ভিতর থেকেই আঘাত করা। মুসলিমদের মাঝে আকীদাগত পার্থক্য উস্কে দিয়ে যেমন খারিজীদলের আতœপ্রকাশ, কাদিয়ানীদেরকে সাহায্য করা, বাহায়ীয়া দলকে প্রতিষ্ঠিত করা ইত্যাদি।
বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মুসলিম যুবক-যুবতীদের আকীদাহ নষ্ট করা, তাদের চরিত্র ধংস করা, তাদের ধর্মের প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি করা ও তাদের মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে হিংসা ও অনিহার বীজ বপন করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ولن ترضى عنك اليهود ولا ألنصارى حتى تتبع ملتهم. (البقرة-১২০)
এবং ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ না করা পর্যন্ত তোমার প্রতি সন্তষ্ট হবে না।
إنهم يكيدون كيدا وأكيد كيدا فمهل الكافرين أمهلهم رويدا. )الطارق ১৫-১৭(
তারা ভীষণ ষড়যন্ত্র করে আর আমিও ভীষণ কৌশল করি। অতএব কাফেরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও। (সূরা তারিক ১৫-১৭)
আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে আরও বলেন :
إن الذين كفروا ينفقون أموالهم ليصدوا عن سبيل الله (سورة الأنفال : ৩৬(
নিশ্চয়ই কাফেররা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যে তাদের ধন সম্পদ ব্যয় করে। (সূরা আল আনফাল ৩৬)
লেখক : লেকচারার
বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়