ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব : প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

img

০১. সূচনাঃ
সকল হামদ-ছানা, স্তুতি ও ভূযুশি প্রশংসা ও গুণকীর্তন আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালার জন্য যিনি আমাদেরকে বাকস্বাধীনতা ও লাবন্যময় ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। দুরুদ, সালাম-শান্তি বর্ষিত হউক রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি। সাহাবা, তাবিয়িন, তাবি-তাবিয়িনসহ সকল আপামর মুসলিমের প্রতিও। আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের অফুরন্ত ভাণ্ডার ঘিরে রেখেছে সৃষ্টিকুলকে। তার কোনো নিয়ামতই গুরুত্বের দিক থেকে কম নয়। তবে কিছু কিছু নিয়ামত প্রয়োজন ও অপরিহার্যতার বিচারে একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্রষ্টা তাদের যে ভাষার নিয়ামত দান করেছেন সেটাও এর অন্তর্ভূক্ত। মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আকুতিকে প্রকাশ করার জন্য আমরা মুখের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ যে শব্দ বের করি সেটাই ভাষা। ভাষাকে আল্লাহ তা‘য়ালা তার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছেন। ভাষা ছাড়া মানবসভ্যতা অচল। বাকহীন নিথর কোনো ভূখণ্ডে বেঁচে থাকা কতটা যে দুর্বিষহ তা বোঝানো মুশকিল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মানবসভ্যতাকে ছন্দময় করে তোলার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা আশরাফুল মাখলুকাত তথা মানুষকে দান করেছেন ভাষার নিয়ামত।

০২. মাতৃভাষা বা বাংলা ভাষার পরিচিতিঃ
বাংলাদেশের প্রধান ও রাষ্ট্রভাষা হলো বাংলা। যদিও বাংলাদেশে আরো প্রায় ২৮টি ভাষা প্রচলিত আছে, তারপরও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। প্রায় ৯৮ ভাগ বাংলাদেশি বাংলা ভাষাকে তাদের প্রধান ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বসবাস করে এমন বাংলাদেশি আদিবাসীগণ তাদের নিজ নিজ ভাষা (চাকমা, মারমা ইত্যাদি) ভাষায় কথা বলে।

একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের দ্বিতীয়, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ট বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা ও একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা। সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।

বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১২০০ বছরের অধিক পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা বাংলাদেশ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছিল। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করণের দাবীতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

০৩. বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ক্রমবিকাশঃ
খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কালে মাগধী প্রাকৃত ও পালির মতো পূর্ব মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ থেকে বাংলা ও অন্যান্য পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষাগুলির উদ্ভব ঘটে। এই অঞ্চলে কথ্য ভাষা প্রথম সহস্রাব্দে মাগধী প্রাকৃত বা অর্ধমাগধী ভাষায় বিবর্তিত হয়। খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর শুরুতে উত্তর ভারতের অন্যান্য প্রাকৃত ভাষার মতোই মাগধী প্রাকৃত থেকে অপভ্রংশ ভাষাগুলির উদ্ভব ঘটে। কোনো কোনো ভাষাবিদ ৫০০ খ্রিস্টাব্দে এই তিন ভাষার জন্ম বলে মনে করলেও এই ভাষাটি তখন পর্যন্ত কোনো সুস্থির রূপ ধারণ করেনি; সে সময় এর বিভিন্ন লিখিত ও ঔপভাষিক রূপ পাশাপাশি বিদ্যমান ছিল। যেমন, ধারণা করা হয়, আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীতে মাগধী অপভ্রংশ থেকে অবহট্‌ঠের উদ্ভব ঘটে, যা প্রাক-বাংলা ভাষাগুলির সঙ্গে কিছু সময় ধরে সহাবস্থান করছিল।

চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে ও বাংলার নবজাগরণের সময় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত ভাষা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল। সংস্কৃত থেকে যে সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় যোগ করা হয়, তাঁদের উচ্চারণ অন্যান্য বাংলা রীতি মেনে পরিবর্তিত হলেও সংস্কৃত বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়। বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠী। ফার্সির পাশাপাশি বাংলাও বাংলার সালতানাতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিলো এবং ব্যাপকহারে ব্যবহার হতো। এছাড়াও প্রোটো বাংলা ছিলো পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা।

ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মধে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো এশিয়াটিক ভাষাসমূহসহ অন্যান্য ভাষা পরিবারের শব্দ স্থান পেয়েছে।

১৯৫১–৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগণের প্রবল ভাষা সচেতনতার ফলস্বরূপ বাংলা ভাষা আন্দোলন নামক একটি ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে পাকিস্তান সরকারের নিকট বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দাবি করা হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহু ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবস পালিত হয়। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা প্রদান করে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারতের অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একইরকম ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘ ভাষা বঙ্গ অঞ্চলের বাঙালি অধিবাসীর মাতৃভাষা। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এছাড়া ভারতের অসম রাজ্যের দক্ষিণাংশেও এই ভাষা বহুল প্রচলিত। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন।

০৪. ইসলামের আলোকে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য-অগনিত দান আর নিয়ামতে পরিপূর্ণ আমাদের জীবন-সংসার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, জীবনের শুরু থেকে বিদায় পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালার অনুগ্রহ ও নিয়ামতের মুখাপেক্ষি আমরা। মহান আল্লাহর নিয়ামতভোগী মাখলুক আমরা। ভাষা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানব জাতিকে প্রদান করা অনন্য বিশেষ এক নিয়ামত ও অনুদান। ভাষা জীবনের এমন একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়; যা ছাড়া সুস্থ ও সম্পূর্ণ জীবন কল্পনা করা যায় না। ভাষার ব্যবহার, ভাষা শিক্ষা ও মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চা করাকে বেশ গুরুত্ব প্রদান করেছে ইসলাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেছেন : خَلَقَ الْإِنسٰنَ ○ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
দতিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে (বয়ান বা উপস্থাপন জ্ঞান)'। [সূরা আর-রাহমান : ০৩ – ০৪]।

আলোচ্য আয়াতের মাঝে মানুষকে উপস্থাপন জ্ঞান শিক্ষা প্রদান করার কথা বলার মাধ্যমেই ভাষা শিক্ষার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা মানবকূলকে যত নিয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে ভাষা অন্যতম। মানুষ ভাষার মাধ্যমে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারে। মনের মণিকোঠায় লুকানো সুখানুভূতি, দু:খানুভূতি নিমিষেই প্রকাশ করতে পারে অন্যের কাছে। আল্লাহ তা‘য়ালা মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন, যা অন্য কোন প্রাণিকে দেননি। পশু-প্রাণিরা কখনো তাদের মনের বেদনা কারে কাছে বলতে পারেনা; আনন্দ উল্লাস অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে পারে না। কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ তাঁদের সব অনুভুতি অন্যের সাথে আদান প্রদান করতে পারে। এ এক অপূর্ব নিয়ামত। আল্লাহ তা‘য়ালার অসংখ্য কুদরত ও নিদর্শন আমাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে। এইসব নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে কথা বলা বা ভাষার নিদর্শনটিই আমরা অনুভব করি এবং ব্যবহার করি।

আল্লাহ তা‘য়ালা দুনিয়ায় কোটি কোটি মানুষ তৈরী করেছেন। তিনি নিপূণতার সাথে প্রত্যেকটি মানুষকে অন্য মানুষ থেকে আলাদাভাবে তৈরী করেছেন। তাদের মধ্যে দিয়েছেন রংয়ের ভিন্নতা; ভাষার ভিন্নতা; দিয়েছেন রুচীর বৈচিত্র্য। কোটি কোটি মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন ধরণ, রূপ-সৌন্দর্য্যে ও ভাষার ভিন্নতা আল্লাহ তায়ালার অপরূপ মহিমা ও কুদরতকে সাক্ষ্য দেয়। প্রমাণ করে আল্লাহ কতো সুনিপূণ কারিগর। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতিকে আলাদা আলাদা ভাষা দিয়েছেন। সব ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি; আল্লাহর দান। সব ভাষাই আল্লাহর কাছে সমান। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ.) -কে সৃষ্টির পর তাঁকে সব ধরণের ভাষা জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন।

০৫. ইসলামের আলোকে ভাষার মর্যাদা :
আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের অফুরন্ত ভাণ্ডার ঘিরে রেখেছে সৃষ্টিকুলকে। তার কোনো নিয়ামতই গুরুত্বের দিক থেকে কম নয়। তবে কিছু কিছু নিয়ামত প্রয়োজন ও অপরিহার্যতার বিচারে একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্রষ্টা তাদের যে ভাষার নিয়ামত দান করেছেন সেটাও এর অন্তর্ভূক্ত। মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আকুতিকে প্রকাশ করার জন্য আমরা মুখের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ যে শব্দ বের করি সেটাই ভাষা। ভাষাকে আল্লাহ তা‘য়ালা তার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন :   وَمِنْ آَيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِلْعَالِمِينَ
‘তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্যতম হল- আসমান জমিন সৃষ্টি, তোমাদের বিভিন্ন রং, ধরণ এবং ভাষার বিভিন্নতা’। [সূরা রূম : ২২]।

ভাষা ছাড়া মানবসভ্যতা অচল। বাকহীন নিথর কোনো ভূখণ্ডে বেঁচে থাকা কতটা যে দুর্বিষহ তা বোঝানো মুশকিল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মানবসভ্যতাকে ছন্দময় করে তোলার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা আশরাফুল মাখলুকাত তথা মানুষকে দান করেছেন ভাষার নিয়ামত। সব প্রাণীরই স্ব স্ব ভাষা আছে, নিজেদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের মাধ্যম জানা আছে। কিন্তু মানুষের ভাষার মতো এত স্বাচ্ছন্দ্য, সহজাত ও সমৃদ্ধ ভাষা অন্য কোনো প্রাণির নেই। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, সেরা জীব হওয়ার মহাত্ম্য। প্রথম মানুষ হযরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর সর্বপ্রথম তাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন।

কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :   وَعَلَّمَ آَدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاءِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
‘আদমকে সৃষ্টি করার পর যত ভাষা দুনিয়াতে আছে সবকিছুর জ্ঞান তাকে তিনি দান করেছেন। [সূরা বাকারা : ৩১]।

আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন :  خَلَقَ الْإِنسٰنَ ○ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
দতিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে (বয়ান বা উপস্থাপন জ্ঞান)'। [সূরা আর-রাহমান : ০৩ – ০৪]।

মহান স্রষ্টা নিজেও মাতৃভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যুগে যুগে মানুষের হেদায়াতের জন্য তিনি যত নবি-রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে মাতৃভাষায় যোগ্য ও দক্ষ করে পাঠিয়েছেন। যখন যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা নবিদের মাতৃভাষায় করেছেন।

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ বলেন :  وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘আমি সব রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তারা আমার বাণী স্পষ্টভাবে বোঝাতে পারে’। [সূরা ইবরাহিম: ৪]।

প্রত্যেক ভাষাভাষীর দায়িত্ব হলো, নিজ নিজ মাতৃভাষাকে সম্মানের সাথে চর্চার মাধ্যমে সমজ্জ্বল করে তোলা। আমাদেরও উচিত হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রিয় ভাষা বাংলাকে বিশ্বের দরবারে মহীয়ান করে তোলার জন্য আকুল প্রয়াস চালানো। তবেই মাতৃভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ পালিত হবে; স্রষ্টার নিয়ামতের যথার্থ কদর করায় আমরা বিশেষভাবে মূল্যায়িত হব।

০৬. বাংলা ভাষায় ইসলাম প্রচারের গুরুত্ব :
ইসলামের সুমহান আদর্শকে বাংলাভাষী মানুষের কাছে পৌছে দিতে বাঙ্গালী মুসলমানের বাংলা ভাষায় বুৎপত্তি অর্জনের বিকল্প নেই। আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন আরবের অধিবাসী তাই কোরান অবতীর্ণ হয়েছে আরবী ভাষায়। পবিত্র কোরানের বাণীসমূহ ও রাসূলের হাদিসকে তাই বাংলা ভাষায় মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে এবং এটাই সময়ের অনিবার্য দাবী। কারণ আমাদের ভাষা আরবি নয়। কোরান বোঝার স্বার্থে মুসলমানদের আরবি ভাষা জানা আবশ্যক হলেও আরবিভাষী না হওয়ার কারণে সকলের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। তাই কোরান, হাদিস ও ইসলামি ফিকহ, তাফসির, বিধি-বিধান ও ইসলামি সাহিত্যকে বাংলা ভাষায় এদেশের মুসলমানদের হাতে পৌছে দিতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান ধর্মপ্রাণ; কিন্তুশুধুমাত্র বাংলা ভাষায় ইসলাম ধর্মের সঠিক চেতনা তাঁদের কাছে পৌছে দেয়ার অভাবে তাঁদের অনেকেই ইসলামের সঠিক জ্ঞান রাখেন না। একসময় ফার্সি ভাষাকে অমুসলিমদের ভাষা মনে করা হত। রুমি, জামি, শেখ শাদিরা সে ভাষায় অসংখ্য কবিতা, সাহিত্য রচনা করে ফার্সি ভাষাকে জয় করে ফেলেন। এতে ইসলামের বিশাল উপকার হয়। আল্লামা ইকবাল উর্দু ভাষায় যে সাহিত্য রচনা করেছেন তা ইসলামি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা ভাষায়ও আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফাসহ অনেকেই তাদের কবিতা ও সাহিত্যে ইসলামকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বর্তমানে আলেম-ওলামাদের অনেকেই লেখালেখি করেন; কিন্তু তা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর। ইসলামের সব বিষয়, সব দিক ও অধ্যায় নিয়ে রচিত বইয়ের বাংলা অনুবাদ হলে, বাংলা ভাষী মুসলমানরা নিমিষেই ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলেঅচনা বুঝতে পারবে এবং আমল করতে পারবে। বাংলা ভাষায় ইসলামের এস গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে কোনো বই বা রচনা না থাকার কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে পারে না। বাংলঅ ভাষায় ইসলাম প্রচারের কাজে মনোনিবশে করা এখন যুগের একান্ত চাহিদা। প্রত্যেকজন নবি তার সময়ের ভাষায় ধর্ম প্রচার করেছে। আমাদের দেশে আমাদের এই সময় যদি কোনো নবির আগমন ঘটতো, অকশ্যই তিনি হতে বাংলা ভাষী। বাংলা হতো তাঁর ভাষা। যেহেতু নবি বা রাসুল আর আসবেন না, তাই নবি-রাসুলদের যারা উত্তরসূরি রয়েছেন তাদের উচিত বাংলণা ভাষায় ইসলাম প্রচারের কাজে এগিয়ে আসা।

০৭. ইসলামের দৃষ্টিতে ভাষার জন্য আত্মত্যাগী মানুষের গুরুত্ব :
ইসলামে শহীদদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। শহীদ দুই প্রকার। এক. ইসলামের জন্য আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন যারা অথবা যাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। দুই. কোনো মহামারীতে, পানিতে ডুবে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে অথবা কোনো ভবন বা স্থাপনা ধসে তার নিচে চাপা পড়ে যদি কোনো মুসলমান প্রাণ হারায়; ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদ বলে বিবেচিত হবেন তারা। এমনিভাবে সন্তান প্রসবের সময় কোনো স্ত্রীলোক যদি মৃত্যুবরণ করেন সেও শহীদ বলে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশের মুসলমানগণ ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। ছালাম, জব্বার, রফিক, বরকতেরা মাতৃভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। অন্যের হাতে অন্যায়ভাবে মৃত্যু বরণ করেছে তারা। সম্পদের জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ দেশে দেশে লড়াই করে কিন্তু মাতৃভাষার জন্য লড়াইয়ের ইতিহাস শুধু বাংলাদেশীরাই তৈরী করেছে। তাই একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ মহানের কাছে দোয়া-প্রার্থনা করা।

০৮. ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্বঃ
মানুষের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ধ্বনিকে ভাষা বলে। ভাষার উদ্ভব ও উৎস সন্ধানে ভাষাতাত্ত্বিকদের অনুসন্ধানী করেছে বটে; কিন্তু ভাষার আবির্ভাব তত্ত্বের কোনো সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য আবিষ্কার করা যায়নি। মানুষের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ধ্বনিকে ভাষা বলে। ভাষার উদ্ভব ও উৎস সন্ধানে ভাষাতাত্ত্বিকদের অনুসন্ধানী করেছে বটে; কিন্তু ভাষার আবির্ভাব তত্ত্বের কোনো সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য আবিষ্কার করা যায়নি। নানা ধরনের থিওরি বা তত্ত্ব আবিষ্কারের মোদ্দা কথা হচ্ছে ভাষা আল্লাহ প্রদত্ত এর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা। পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষা রয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তারা পৃথিবীতে এসেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা যে অঞ্চলে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন সেই নবি বা রাসুলকে সে অঞ্চলের মানুষের ভাষাভাষী করেছেন।

আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদ [সা.]-এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। তার কাছে আসা আসমানি কিতাব কুরআনের ভাষা আরবি। প্রিয় নবি সা.-এর মাতৃভাষা আরবিতে কুরআন নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন :   فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
‘আমি আপনার ভাষায় কোরানকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা স্মরণ রাখে। [সুরা আদদুখান, আয়াত ৫৮]।

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অপরিসীম গুরুত্বের সঙ্গে মাতৃভাষাকে স্মরণ করে ইসলাম। মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। পবিত্র কোরান থেকেই আমরা জানতে পারি যে, ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন ইসলামের ভাষাও তেমনি সর্বজনীন। এ কারণেই দেখা যায়, নবিজির [সা.] ইন্তেকালের পর ইসলাম প্রচারকগণ পৃথিবীর যে অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে গেছেন, সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষা আয়ত্ত করে সেই ভাষাতেই ইসলামের সুমহান বাণী তাদের কাছে তুলে ধরেছেন। মুসলমানরাই বাংলা ভাষাকে স্বমহিমতায় সমুন্নত করেছে। বস্তুত মুসলিম মননে মাতৃভাষাপ্রীতি সঞ্চারিত হয়েছে ইসলামের মাতৃভাষার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপের কারণে। সুতরাং মাতৃভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা অপরিহার্য বিষয়। পবিত্র কোরান ও হাদিসে নবি তথা ইসলামের আলোকে ধর্মপ্রাণ মানুষের সৎ মনোভাব প্রকাশের দ্বারা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা এবং সর্বোপরি বিশ্বমানবতার কল্যাণে মাতৃভাষার চর্চা, অনুশীলন, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধনে ভাষা শহিদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শনে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করাই উচিত।

০৯. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিব রাসূলে কারিম সাঃ-কে উদ্দেশ করে এরশাদ করেনঃ
ক. আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা বলেন :    فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنْذِرَ بِهِ قَوْمًا لُدًّا
‘আমি কুরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি মুত্তাকিদের সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন।’ [সূরা মরিয়ম : ৯৭]।

খ. আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা বলেন :   وَكَذَلِكَ أَنْزَلْنَاهُ قُرْآَنًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
‘এমনিভাবে আমি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্ক বাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক জোগায়।’ [সূরা ত্বহা : ১১৩]।

গ. আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা বলেন :   قُرْآَنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِي عِوَجٍ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
‘আরবি ভাষায় এই কুরআন যাতে কোনো বত্র্নতা নেই। যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে।’ [সূরা আয-যুমার : ২৮]।

ঘ. পবিত্র কুরআন মজিদ হতেই আমরা জানতে পারি যে, ইসলামি আদর্শ যেমন সার্বজনীন ইসলামের ভাষাও তেমনি সার্ব জনীন, এভাবে ভাষা, ও আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ইসলাম শাশ্বত সত্য ধর্ম প্রচারে মাতৃভাষা চর্চার জোরালো তাগিদ দিয়ে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন :   اُدْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ   
‘আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে বিজ্ঞানসম্মত ও উত্তম ভাষণ দ্বারা আহ্বান করুন এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে আলোচনা করুন।’ [সূরা আন-নাহল : ১২৫]।

ঙ. আল্লাহ সুবহানাহু তা‘য়ালা বলেন :   إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآَنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
‘আমি একে আরবি ভাষায় কুরআন রূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ [সূরা ইউসুফ : আয়াত ০২]।

আর এ কারণেই দেখা যায়, পরবতী সময়ে ইসলাম প্রচারকগণ পৃথিবীর যে অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে গেছেন, সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষা আয়ত্ত করে সেই ভাষাতেই ইসলামের সুমহান বাণী তাদের কাছে তুলে ধরেছেন। তাদের মাতৃভাষায় পবিত্র কুরআন মজিদ অনুবাদ করে তাদেরকে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান দান করেছেন এবং নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের হুকুম-আহকাম, নিয়মকানুন শিক্ষা দিয়েছেন।

যতদূর জানা যায়, বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ-এর খিলাফতকালের মধ্যভাগ হতে ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, তুরস্ক, মিসর প্রভৃতি দেশ হতে ইসলাম প্রচারকগণ বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য এসেছেন। তারা এ দেশে এসে এ দেশের মানুষের ভাষা আয়ত্ত করেছেন এবং এ দেশের মানুষের ভাষাতেই ইসলাম প্রচার করেছেন। এ দেশের মানুষ অতি সহজেই তাদের কাছ থেকে ইসলাম সম্পকে জানতে পারে, ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। আরো লক্ষ করা যায়, বাংলা ভাষা এক দারুণ অবহেলিত অবস্থা থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয় মুসলমানদের আগমনের ফলে। [তথ্যসূত্র : আল-কুরআন, বাংলা উইকপিডিয়া, বাংলা পিডিয়া ও ভাষার অন্যান্য গ্রন্থাবলী]।

১০. উপসংহারঃ
ভাষা মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার পক্ষ বিশাল নি‘য়ামত। এই নি‘য়ামত যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি তাদের মূল্যায়ণ করা, তাদের রুহে মাগফিরাত কামনা করা, এই ভাষা চর্চা করা এবং দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণে এই নি‘য়ামত যেন আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনে মহান আল্লাহর নিকট এই কামনা-বাসনা ও প্রত্যাশ্যা ব্যক্ত করছি। মহান আল্লাহ সকল ভাষা শহীদদের ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে ইল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে এই ভাষা ব্যবহার করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।

 

১১. তথ্যসূত্রঃ
ক. আল-কুরআনুল কারীম।
খ. মাতৃভাষা, খুতবাতুল ইসলাম, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির (রাহি.)।
গ. ইন্টারনেট ভিত্তিক উন্মুক্তবিশ্বকোষ ; উইকিপিডিয়া।
ঘ. উন্মুক্ত ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার ; মাকতাবাতুশ শামিলা।
ঙ. অন্যান্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ, সাময়িকী ও গ্রন্থাবলী।

সংকলন: আব্দুস সালাম হুসাইন আলী
শিক্ষক, ইনসাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা।