ইসলাম ও ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ (২)

img

পাঁচ . যাদু করা বা তার আশ্রয় নেয়া
 سحر বা যাদু এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- এমন বিষয় যার মাধ্যম অতি সূক্ষ্ম ও গোপনীয়। 
পরিভাষায়- এমন বিদ্যা বা ঔষধ জাতীয় বস্তু যা প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যের শরীর প্রভাবিত হয়। 
যাদু দুই ভাগে বিভক্তঃ 
ক) কুফরঃ শয়তান ও জীন সাধনা বা কুফরী কালামের মাধ্যমে অন্যের উপর আছর করা বা কারো ক্ষতি করা। 
হুকুমঃ এ প্রকারের যাদুকর কাফের। রাসূল   বলেন, 
اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَاهُنَّ؟ قَالَ: اَلشِّرْكُ بِاللهِ ، وَالسِّحْرُ ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّباَ، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصِنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ.)بخاري (২৬১৫)، ومسلم (১৪৫ (
অর্থঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক।(কেননা তা ঈমান-আমলকে ধ্বংস করে দেয়) সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল! ঐগুলো কি কি? উত্তরে রাসূল   বলেন এগুলো হল ঃ ১. র্শিক ২. যাদু ৩. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা। ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ৭. মু‘মিনা অবলা সতি সাধ্বী নারীর উপর ব্যাভিচারের অপবাদ দেয়া। (বুখারী:২৬১৫,মুসলিম:১৪৫)
খ) ফিস্কঃ ঔষধ ও কেমিক্যাল জাতীয় বস্তুর মাধ্যমে অন্যকে প্রভাবিত করা। 
হুকুমঃ এ প্রকার যাদুকর গুনাহগার ও নাফরমান। তবে কাফের হবে না। 
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ  وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلـكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ. (بقرة-১০২)
অর্থঃ সুলায়মান (আঃ) কুফরী করেন নি, বরং শয়তানেরা কুফরী করেছে। কেননা তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে।(বাকারা-১০২) 
যাদুর অন্তর্ভুক্ত বিষয় ঃ
১. পাখি উড়িয়ে ভাগ্য গণনা করা।
২. মাটিতে রেখা টেনে ভাগ্য গণনা করা। 
৩. কোন কিছু দেখে বা শুনে সুলক্ষণ বা কুলক্ষণ মনে করা। 

ছয়. মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফের-মুশরিকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা
মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফের-মুশরিকদের পক্ষ নেয়া এবং তাদের সহযোগিতা করা। যদি কোন ব্যক্তি অপর কারো কুফরী কর্মে সহযোগিতা করে আর যদি সে কুফরী কর্মটি এমন হয় যে, সেটি মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়, তাহলে উক্ত কুফরী কর্মে সহযোগিতা করার কারণেও কোন মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। 
মদীনার মুনাফিকরা এ পদ্ধতিতেই ্ইসলাম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, 
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ  أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ . (مجادلة : ২২) 
অর্থ : তুমি এমন জাতিকে পাবে না, যারা আল্লাহ্ ও আখেরাতে ঈমান এনেছে ঐ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করতে, যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জাতি-গোষ্ঠি হয়। এরাই তারা, যাদের অন্তরে আল্লাহ্ লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার নীচ দিয়ে ঝরণাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই সফলকাম। (মুজাদালা : ২২) 
তাদের ইসলাম ভঙ্গের কারণ উপস্থাপন করে আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,
وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ  . (مائدة : ৮১) 
অর্থ : যদি তারা আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং তাঁর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস রাখত, তবে তারা কখনো তাদেরকে (কাফের-মুশরিকদেরকে) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসেক।(মায়েদা:৮১)

সাত।. মুহাম্মদ   কর্তৃক আনীত জীবনব্যবস্থার কোন একটি বিষয়কে অপছন্দ করা
রাসূলুল্লাহ্   আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দ্বীন বা জীবনবিধান নিয়ে এসেছেন সে দ্বীনের কোন একটি বিষয়কে অপছন্দ করার অর্থ হচ্ছে- এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাসূল   এর আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা তাঁর আনীত মতবাদ থেকে অন্য কোন ব্যক্তির প্রবর্তিত মতবাদ উত্তম। অথবা এরূপ মন্তব্য করা যে, ইসলাম একটি পুরাতন ধর্মবিশ্বাস; বর্তমান ডিজিটাল যুগের জন্য এর বিধি-বিধানসমূহ উপযুক্ত বা প্রযোজ্য নয়। তাহলে সে ইসলাম ও ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ. (آل عمران : ৮৫)
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ-অনুকরণ করবে তার কাছ থেকে তা কখনো কবুল করা হবে না; সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (আলে ইমরাম-৮৫) 
এরূপ মনে করার অর্থই হচ্ছে রাসূল   এর জীবনাদর্শকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে বিশ্বাস না করা, তাঁর আনীত বিধানের অবাধ্য হওয়া এবং ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে বিশ্বাস না করা। 

আট . আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কাউকে আল্লাহর মত করে ভালোবাসা
ভালবাসা একটি ইবাদত, আবার এটা ঈমান ও ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণও বটে। পৃথিবীর কোন সৃষ্টিকে যদি আল্লাহর মত করে কেউ ভাল বাসে, তাহলে এটা ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। কেননা মু‘মিনের চুড়ান্ত ভালবাসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, 
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ . (بقرة: ১৬৫) 
অর্থ : মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমন ভালবাসে যেমন আল্লাহকে ভালবাসা উচিত। আর যারা ঈমান এনেছে তারা তো সত্যিকারার্থে কেবলমাত্র আল্লাহকেই সর্বাধিক ভালবাসবে। (বাকারা: ১৬৫)  
আল্লাহ্ তা‘আলা তিনি ইলাহ্ হিসেবে একক। সকল দিক থেকে তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। অতএব বান্দার সর্বাধিক ভালবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি একক এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর কোন শরীক নেই। এমতাবস্থায় কেউ যদি অপর কাউকে আল্লাহর মত করে ভালবাসে তাহলে সেটা র্শিক হিসেবে পরিগণিত হবে। 

নয়. ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবন ব্যবস্থাকে উত্তম মনে করা
মুহাম্মদ   আল্লাহর পক্ষ হতে যে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন তার পরিবর্তে অন্য কোন জীবন ব্যবস্থাকে উত্তম মনে করা। যেমন- প্রচলিত গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ইহুদীবাদ খৃস্টবাদ এবং হিন্দুত্ববাদ ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি যদি মৌখিকভাবে দাবী করে যে, সে একজন মুসলিম, কিন্তু তার উঠা-বসা, চলা-ফেরা, লেন-দেন ও আচার-অনুষ্ঠানসহ সকল প্রাত্যহিক কর্মকান্ডে আংশিক বা পরিপূর্ণরূপে অমুসলিমদের প্রবর্তিত নিয়ম-কানুন ও নীতি-নৈতিকতা মেনে চলে এবং তা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে তাহলে ইসলাম ও ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অবশ্যই তাকে তাওবা করতে হবে এবং সঠিক ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, 
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيناً فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ . (آل عمران: ৮৫)
অর্থ : আর যে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন (জীবনবিধান) চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (আলে ইমরান: ৮৫) 
 أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا  . (نساء : ৬০) 
অর্থ : আপনি কি তাদেরকে দেখেননি  যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।  

দশ . আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়া
আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতে যে দ্বীন বা জীবনবিধান দান করেছেন, সেই জীবনবিধান থেকে বিমুখ হয়ে যাওয়া অথবা এর কোন একটি আইনের বিরোধিতা করা। এর দ্বারা ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে-
আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াটা হচ্ছে কুফরীর আলামত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ . (السجدة : ২২)
অর্থ : ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেয়া হয়েছে অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (আস্ সিজদাঃ ২২) 
এর বিপরীতে মু‘মিনের আলামত হচ্ছে, আল্লাহর বিধি-বিধান শুনার সাথে সাথেই তা গ্রহণ করা। তিনি বলেন, 
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ . وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ. (النور : ৫১-৫২) 
অর্থ : মো‘মিনদের উক্তি তো এই, যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম; মূলত তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সত্যিকারের কৃতকার্য। (আন্ নূর: ৫১-৫২) 

মারকায ইমাম বুখারী, নিশাত নগর, টঙ্গী, গাজীপুর মহানগর