ইসলাম ও ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ (১)

img

ঈমান   এবং নেক আমল আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ নিয়ামত। সকল মুসলিম এবং মু‘মিনই আল্লাহর এ নেয়ামত লাভে তাঁর করুনা লাভের প্রত্যাশী। তাঁর করুনা বা দয়া ব্যতীত কেউ ঈমান লাভ করতে পারে না। আর ঈমান ব্যতীত আমলও কোন কাজে আসবে না। মানুষের কাজ যত ভাল ও কল্যাণেরই হোক না কেন, ঈমান ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা সময়ের শপথ করে মানুষের ধ্বংসের কথা তুলে ধরেছেন এবং যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে তারাই শুধু এ ধ্বংস থেকে বাঁচতে পারবে। তিনি বলেন,
وَالْعَصْرِ. إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ . إِلاَّ الَّذِيْنَ آَمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ. (العصر)
অর্থ : সময়ের কসম, নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। (আল-আসর)
আল্লাহর হুকুমের যথাযথ আনুগত্য, তাঁর রাসূলের প্রকৃত অনুকরণ-অনুসরণ এবং ইসলামকে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ ও ব্যক্তি থেকে আন্তর্জাতিক পর্যন্ত সকল পর্যায়ে পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসাবে সন্তুষ্টচিত্তে না মেনে চললে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করা যায় না। রাসূল   বলেন, 
ذَاقَ طَعْمُ الْإِيْمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًا وَبِالْإِسْلاَمِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ رَّسُوْلاً . (مسلم : ৪৫৮৪)
অর্থ : ঐ ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেল আল্লাহকে রব হিসাবে পেয়ে, ইসলামকে জীবন বিধান হিসাবে পেয়ে এবং মুহাম্মদ   কে রাসূল হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হল। (মুসলিম:৪৫৮৪) 
রাসূল   আরো বলেন, 
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الْإِيْمَانِ، مَنْ كَانَ اللهُ وَرَسُوْلَهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُّحِبَّ الْمَرْءُ لاَ يَحِبُّهُ إِلاَّ لله، وَأَنْ يَّكْرَهَ أَنْ يَّعُوْدَ فِي الْكفُرْ ِبَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللهُ مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يَّقْذِفَ فِي النَّارِ . )مسلم : ৪৩) 
অর্থ : তিনটি বৈশিষ্ট বা গুন যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের স্বাদ পাবে। এক. আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার নিকট জীবনের সকল কিছুর চেয়ে অধিক প্রিয় হবে। দুই. কাউকে ভাল বাসবে তো আল্লাহর জন্য ভাল বাসবে। তিন. পূনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করবে , যেমন সে আগুনে ঝাঁপ দেয়াকে অপছন্দ করে।(মুসলিম:৪৩)

ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ
মানুষের দ্বারা অনেক সময় ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পাপকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু যে কোন পাপকর্মের মাধ্যমেই তার ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গ হয় না; এগুলোর মাধ্যমে সে ফাসিক হিসাবে গণ্য হয়, বান্দার গুনাহের পাল্লা ভারি হয় এবং এ কারণে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হয়। তবে এমন কিছু পাপ রয়েছে যা বান্দাকে ঈমান ও ইসলাম থেকে বের করে দেয় এবং সে মুরতাদ হিসাবে গণ্য হয়। এরূপ বান্দা তাওবা করে ইসলামের মধ্যে ফিরে না আসলে পরকালে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামের উপযুক্ত হবে। নিম্নে ঈমান ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলো তুলে ধরা হল। 
এক. .  الشرك بالله/ আল্লাহর সাথে শিরক করা
র্শিক শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- অংশিদার সাব্যস্ত করা। এ র্শিক হতে পারে আল্লাহর নিজ সত্ত্বার সাথে, ইবাদাতের সাথে, তাঁর যে কোন গুনবাচক নামের সাথে, তাঁর বিধানের সাথে, তাঁর পছন্দের সাথে, তাঁর সম্মান ও ইজ্জতের সাথে, তাঁর ভালবাসার সাথে, তাঁর আনুগত্যের সাথে, মান্নত করার ক্ষেত্রে, পশু যবেহ করার ক্ষেত্রে ইত্যাদি। 
শিরকের ভয়াভহ পরিণতি সমূহ ঃ
* র্শিক আল্লাহর উপর বড় জুলুমঃ পবিত্র কুরআনুল কারিমে এ র্শিককে আল্লাহর সাথে মহা জুলুম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ 
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَابُنَيَّ لاَتُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ.  (لقمان-১৩)
অর্থঃ (ঐ সময়ের কথা স্মরণ করুন) যখন লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে এ মর্মে উপদেশ দিচ্ছেন, হে আমার সন্তান! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করোনা, নিশ্চয়ই র্শিক হচ্ছে মহা জুলুম।(লোকমান-১৩)  
* শিরকের গুনাহ আল্লাহ মাফ করবেন নাঃ বান্দা যত বড় গুনাহই করুক না কেন আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তিনি শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেনঃ 
إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذلِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ.(نساء-৪৮)
 অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না যে আল্লাহর সাথে র্শিক করে। এ ছাড়া তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। 
আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ 
يَاابْنَ آدَمَ لَوْ آتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايًا لاَ تُشْرِكُ بِيْ شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً. (ترمذي) 
অর্থঃ হে আদম সন্তান তুমি যদি পৃথিবী সমপরিমান গুনাহ নিয়ে আমার সাথে (কিয়ামতের দিন) সাক্ষাত কর, আর যদি আমার সাথে কাউকে র্শিক না কর, তাহলে আমি পৃথিবী সমপরিমান ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাত করব। (তিরমিযী)
* র্শিককারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবেঃ যে আল্লাহর সাথে র্শিক করবে, তার সকল নেক আমল বিনষ্ট করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে  লক্ষ্য করে বলেন, 
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ.(زمر : ৬৫)
অর্থঃ (হে নবী) আপনি যদি (আমার সাথে) র্শিক করেন তাহলে আপনার সকল নেক আমল বিনষ্ট করে দেয়া হবে।  (যুমার : ৬৫) তিনি আরো বলেনঃ
(مائدة: ৭২)   إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكُ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوـهُ النَّارُ.
অর্থঃ নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে র্শিক করবে তার জন্য জান্নাত হারাম এবং তার ঠিকানা হবে আগুন। (মায়েদা: ৭২)
 রাসূল   বলেনঃ 
مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ.(مسلم: ৯৩)  
অর্থঃ যে এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল যে, জীবদ্দশায় আল্লাহর সাথে র্শিক করেনি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহর সাথে র্শিক করে মৃত্যু বরণ করল সে মৃত্যুর পর জাহান্নামে প্রবেশ করবে।(মুসলিম)
* আল্লাহর প্রতি বান্দার হক ও বান্দার প্রতি আল্লাহর হকঃ প্রখ্যাত সাহাবী মুয়াজ বিন জাবাল (রা) বলেন, একবার আমি রাসূল   এর পিছনে একটি গাধায় আরোহী ছিলাম। নবীজি  আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে মুয়াজ! তুমি কি জান আল্লাহর প্রতি বান্দার হক কি এবং বান্দার প্রতি আল্লাহর হক কি? মুয়াজ (রা) বলেন, আমি বললাম আল্লাহর ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। উত্তরে রাসূল   বলেনঃ 
حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَّعْبُدُوْهُ وَلاَ يُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا، وَحَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لاَّ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا. (بخاري)
অর্থঃ বান্দার প্রতি আল্লাহর হক বা অধিকার হচ্ছে- বান্দা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে র্শিক করবে না। আর আল্লাহর প্রতি বান্দার হক বা অধিকার হচ্ছে যে, তাঁর সাথে র্শিক করল না তাকে (জাহান্নামের) আযাব না দেয়া। (বুখারী)

শিরকের প্রকারভেদঃ র্শিক সাধারণত দুই প্রকার। যথা- 
১.শিরকে আকবার বা বড় শিরক। 
২.শিরকে আসগর বা ছোট শিরক। 
শিরকে আকবর বা বড় শিরক হচ্ছে- কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো। অর্থাৎ যেভাবে আল্লাহকে ডাকা হয় অন্যকে সেভাবে ডাকা এবং অন্য কারো জন্য  কোন ধরণের ইবাদত নির্দিষ্ট করা। যেমন- সাহায্য চাওয়া, মান্নত করা এবং কোরবানী করা ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) রাসূল  কে জিজ্ঞেস করলেনঃ সবচেয়ে বড় র্শিক কি? 
উত্তরে তিনি বলেনঃ أَنْ تَجْعَلَ لِلّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ.(بخاري ومسلم)  অর্থঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম) 
শিরকে আকবার বা বড় শিরকের কিছু উদাহরণ ঃ 
১. দো‘আর মধ্যে র্শিকঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে কিছু প্রার্থনা করা।আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ 
وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ. (يونس-১০৬)
অর্থঃ তুমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডেকো না, যে তোমার কোন উপকারও করতে পারে না ক্ষতিও করতে পারে না। যদি তা করো নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (ইউনুস-১০৬)
২. আল্লাহর গুনের মধ্যে র্শিকঃ এ বিশ্বাস রাখা যে, নবী ও আওলিয়াগণ গায়েব জানেন। এ বিশ্বাস খন্ডন প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَيَعْلَمُهَا إِلاَّهُوَ.(أنعام-৫৯) অর্থঃ তাঁর কাছেই রয়েছে গায়েবের চাবিকাঠিসমূহ, তিনি ব্যতীত কেউ তা জানে না। (আন আম-৫৯) 
৩.মহব্বতের ক্ষেত্রে র্শিকঃ আল্লাহকে ভালবাসার মত কোন অলী, বুযূর্গ, পীর-মাশায়েখকে ভালবাসা। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ أَنْدَادًايُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِ وَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَشَدُّ حُبًّاللهِ. (بقرة-১৬৫)
অর্থঃ মানুষের মধ্যে এমন অনেক আছে যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে নেয় এবং তাদেরকে আল্লাহর ভালবাসার মত ভালবাসে। আর যারা ঈমানদার তাদের সবচেয়ে বেশি ভালবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই।(বাকারা-১৬৫) 
যেমন- কোন পীরের নির্দেশে জামাতে সালাত আদায় না করা বা সালাত ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি। 
৪. আনুগত্যের ক্ষেত্রে র্শিকঃ পাপ কাজে কোন ব্যক্তির আনুগত্য করা। রাসূল   বলেনঃ 
لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِيْ مَعْصِيَةِ اللهِ. (أحمد)
অর্থঃ স্রষ্টার অবাধ্যতার ক্ষেত্রে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। (আহমদ) 
৫. হলুলের ক্ষেত্রে র্শিক করাঃ অর্থাৎ- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে অবস্থান বা প্রবেশ করছেন এমন ধারণা রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ  الرَّحْمنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى. (طـه-৫) অর্থঃ রহমান (আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন) (ত্ব-হা ঃ৫) 
৬. দুনিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে র্শিক করাঃ এ বিশ্বাস রাখা যে, কোন বুযূর্গ, অলী বা বা শহর কুতুব দেশ বা দুনিয়া পরিচালনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهَ.  অর্থঃ যদি জিজ্ঞেস করো সমস্ত কিছু কে পরিচালনা করেন? তারা সাথে সাথে উত্তর দিবে আল্লাহ। (ইউনুস-৩১)
৭. বিচারের ক্ষেত্রে র্শিক করাঃ কুরআন ও হাদীস বিরোধী আইন প্রণয়ন করা ও তা জায়েয মনে করা এবং বর্তমান যুগে কুরআন সুন্নাহ্র আইনকে অনুপযুক্ত মনে করা। আদালতে কুরআন সুন্নাহ বাদ দিয়ে মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার ফয়সালা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الكَافِرُوْنَ. (مائدة-৪৪)
অর্থঃ যারা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করেনা তারা কাফির। (মায়েদা-৪৪) 
হুকুমঃ বড় র্শিক এর গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না। এ গুনাহ বান্দার সকল নেক আমল নষ্ট করে দেয়।
এ কারণে বান্দা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং জান্নাত তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। (উপরে শিরকের পরিণতির পয়েন্টে এর স্বপক্ষে দলীল রয়েছে।)
শিরকে আসগর বা ছোট র্শিক হচ্ছে- ঐ সকল কাজ যা মানুষকে বড় শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। 
হুকমঃ ইহা কবীরা গুনাহ। তবে ইহা সকল আমল নষ্ট করে দেয় না। 
উদাহরণঃ 

এক. রিয়াঃ রিয়া শব্দের শাব্দিক অর্থ- প্রদর্শন বা লোক দেখানো। পরিভাষায়ঃ মানুষকে দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার আশায় ইবাদত করা।  রাসূল   বলেনঃ     أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الأَصْغَرَ فَسُئِلَ عَنْهُ فَقَالَ اَلِّريَاءُ . (ابن ماجة)
অর্থঃ “আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরকের ভয় পাচ্ছি। জিজ্ঞেস করা হলো ছোট র্শিক কি? উত্তরে তিনি বলেন, তা হচ্ছে ‘রিয়া’ অর্থাৎ লৌকিকতা বা লোক দেখানো”। 

রিয়া সাধারণত দুই প্রকার। যথা-
ক) মূল ইবাদত লোক দেখানোর জন্যঃ ইবাদত শুরু থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়ে লৌকিকতার জন্য হওয়া। যা কখনো তিনি গ্রহণ করবেন না। কেননা আমলটি আল্লাহর জন্য হয়নি। আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেনঃ 
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْرِيْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ. (مسلم)
অর্থঃ আমি অংশীদারদের র্শিক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি তাকে ও ঐ র্শিককে প্রত্যাখ্যান করি। (মুসলিম) 
খ) ইবাদতের মধ্যে রিয়া দেখা দেয়াঃ অর্থাৎ মূল ইবাদত আল্লাহর জন্য শুরু করার পর উক্ত ইবাদতের মাঝে লোক দেখানো বা তাদের প্রশংসা অর্জনের ইচ্ছা সৃষ্টি হওয়া। আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল   বলেনঃ 
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِيْ مِنَ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ؟ قَالُوْا : بَلَى ، قَالَ : اَلشِّرْكُ الْخَفِيُّ يَقُوْمُ الرَّجُلُ فَيُصَلِّيْ فَيَزِيْنُ صَلاَتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظْرِ رَجُلٍ. (مستدرك وأحمد) 
অর্থঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না যে বিষয়টি আমার নিকট মাসীহ দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? সাহাবায়ে কেরামগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন। তিনি বলেনঃ তা হচ্ছে গোপন র্শিক। এর উদাহরণ হচ্ছে- সালাত শুরু করার পর কেউ দেখছে মনে করে তা আরো সুন্দরভাবে আদায় করা। (মুসতাদরাক ও আহমদ)
২.আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম বা শপথ করা। রাসূল   বলেনঃ مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ. (أحمد)
অর্থঃ যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম বা শপথ করে সে আল্লাহর সাথে র্শিক করল।(আহমদ)

দুই. আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝখানে কোন মাধ্যম স্থির করা
অর্থাৎ এরূপ মনে করা যে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অথবা নিজের গুনাহ্ মাফের জন্য সরাসরি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করাটা যথেষ্ট নয়; বরং এ কাজের জন্য এমন কোন সুপারিশকারীর প্রয়োজন রয়েছে, যাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তারা আল্লাহর নিকট তার জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তার সুপারিশ কবুল করবেন। আল্লাহর ব্যাপারে এরূপ ধারণা পোষণ করলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা এরূপ ধারণা বান্দাকে দুই দিক দিয়ে শিরকের সাথে সম্পৃক্ত করে। 
প্রথমত ঃ এসব আকী¡দা-বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলার ক্ষমতার সাথে অন্য কারো ক্ষমতাকে সাদৃশ্য করা হয় অথবা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা হয়। সুতরাং এ দিক থেকে বিষয়টি তাওহীদে রুবুবিয়াতের পরিপূর্ণ লঙ্ঘন। 
দ্বিতীয়ত ঃ এসব আক্বীদা - বিশ্বাস  গাইরুল্লাহ্কে উপাস্যে পরিণত করে। ফলে মানুষ কবর, মাযার সহ বিভিন্ন ধরনের মূর্তিপুজার দিকে ধাবিত হয়। সুতরাং এ দিক থেকে বিষয়টি তাওহীদে উলুহিয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত। 
পূর্বযুগ থেকে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের ঈমান এই পদ্ধতিতে ভঙ্গ করে আসছে। মূর্তিপুজাও ঠিক এসব ধারণার ভিত্তিতেই আবিস্কৃত হয়েছিল। মক্কার মুশরিকরাও অনুরূপ আক্বীদা বিশ্বাস করত। আর এসব ধারণার উপর নির্ভর করেই তারা বিভিন্ন দেব-দবীর পূজা করত। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস খন্ডন করে বলেন,
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ . (يونس : ১৮) 
অর্থ : আর তারা আল্লাহ্ ব্যতীত যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারে না। তারা বলে এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে, যা তিনি জানেন না ? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে তাঁর সাথে শরীক করে তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। (ইউনুস : ১৮) 
তিনি আরো বলেন, 
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ . (زمر:৩) 
অর্থ : আর যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদত এজন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ (কিয়ামতের দিন) তাদের মধ্যে তাদের বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মিথ্যাবাদী কাফেরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (যুমার : ৩) 
তিনি আরো বলেন, 
وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَىٰ كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُم مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمْ تَزْعُمُونَ . (انعام : ৯৪) 
অর্থ : তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছি। আর আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। তোমরা যাদেরকে তোমাদের শরীক মনে করতে , তোমাদের সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। অবশ্যই তোমাদের সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তা নিস্ফল হয়েছে। (আনআম: ৯৪) 
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল   বলেন ঃ
يَلْقَى إِبْرَاهِيْمُ أَبَاهُ آَزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَى وَجْهِ آَزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ فيَقُوْلُ لَهُ إِبْرَاهِيْمُ أَلَمْ أَقُلْ لَّكَ لاَ تَعْصِنِيْ فَيَقُوْلُ أَبُوْهُ فَالْيَوْمَ لاَ أَعْصِيْكَ فَيَقُوْلُ إِبْرَاهِيْمُ يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِيْ أَنْ لاَّ تُخْزِيَنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِيْ الْأَبْعَدِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى إِنِّيْ حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ ثُمَّ يُقَالُ يَاإِبْرَاهِيْمُ مَاتَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَبِذِيْخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ. (بخاري: ৩৩৫০، مستدرك:২৯৩৬) 
অর্থ : কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতার সাক্ষাৎ পাবেন। আযরের মুখমন্ডলে মলিনতা থাকবে। তখন ইবরাহীম (আঃ) তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার (দাওয়াত) অমান্যকারী হেবন না। তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকট আবেদন করবেন, হে আমার রব ! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা (আপনার) রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চাইতে আমার কাছে অধিক অপমানের আর কি হতে পারে ? তখন আল্লাহ্ বলবেন, আমি কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম ! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন । দেখতে পাবেন তার পিতার স্থানে সমস্ত শরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে আছে। অত:পর এটাকে চারপাশ দিয়ে বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। (বুখারী:৩৩৫০, মুস্তাদরাক:২৯৩৬) 

তিন . কাফের মুশরিকদেরকে কাফের মনে না করা
অর্থাৎ যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ্ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। যেমন- ইহুদী, খৃস্টান, মুশরিক ও বৌদ্ধদের কুফরীর ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর কোন দ্বিমত নেই। তাই কোন কোন মুসলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলে অথবা তাদেরকে কাফের হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করলে সে নিজেই কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করে যে, ইহুদী, খৃস্টান ও ইসলাম এই তিন ধর্মই সঠিক ও সত্য; প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীকে আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছায়; তাই যার যে ধর্ম পছন্দ হয়, সে তা গ্রহণ করতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই, তাহলে তারও ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ আক্বীদা-বিশ্বাসের কারণে ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গ হওয়ার কারণ হচ্ছে-
প্রথমত ঃ لاَ إِلــــــهَ إِلاَّ الله তে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য একটি মৌলিক শর্ত হচ্ছে اَلْكُفْرُ بِمَا يُعْبَدُ مِنْ دُوْنِ اللهِ  অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যতীত সকল গাইরুল্লাহকে অস্বীকার করা। যখন গাইরুল্লাহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, তখন আর “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ তে ঈমান থাকে না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, فَمَنْ يَّكْفُرُ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرُوَةِ الْوُثْقَى . (بقرة: ২৫৬)
অর্থ : সুতরাং যে ত্বগুতকে (আল্লাহ্ ব্যতীত গাইরুল্লাহ্) অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল, যা কখনো ছিড়বে না। (বাকারা: ২৫৬) 
দ্বিতীয়ত ঃ এ আক্বীদা-বিশ্বাসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তির মধ্যে কাফিরদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা বিদ্ধমান রয়েছে এবং কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ্ কাফেরদেরকে আন্তরিকভাবে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, 
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آَمَنُوْا لاَ تَتَّخِذُوْا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَإِنَّه مِنْهُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِيْ الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ . 
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধু বানাবে সে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (মায়েদা: ৫১) 
তিনি আরো বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آَمَنُوْا لاَ تَتَّخِذُوْا آَبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيْمَانِ. (توبة:২৩)
অর্থ : হে মু‘মিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরিকে অধিক ভালবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (তাওবা : ২৩) 
রাসূল   বলেন , أَنَا بَرِيْءٌ مِّنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيْمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِنْنَ. (ابوداود:২৬৪৭)   অর্থ : আমি ঐ সকল মুসলিমদের থেকে দায়মুক্ত, যারা মুশরিকদের মাঝে বসবাস করে। (আবু দাউদ: ২৬৪৭) 
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কাফের-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের কাজকর্মকে সমর্থন দেয়া, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন না করা, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদি সবই ইসলাম ও ঈমান ভঙ্গের কারণ। 

চার.  ইসলামের কোন একটি বিষয় নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রƒপ করা
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্   আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সে দ্বীন সম্পর্কে অথবা দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ ও উপহাস করা। এরূপ করাটা মূলত কাফেরদের একটি বিশেষ স্বভাব। রাসূল   এর যুগে কাফেররাও মুসলিমদেরকে নিয়ে এরূপ ব্যবহার করত। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, 
إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا يَضْحَكُونَ . وَإِذَا مَرُّوا بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ . وَإِذَا انقَلَبُوا إِلَىٰ أَهْلِهِمُ انقَلَبُوا فَكِهِينَ . وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوا إِنَّ هَٰؤُلَاءِ لَضَالُّونَ .وَمَا أُرْسِلُوا عَلَيْهِمْ حَافِظِينَ . فَالْيَوْمَ الَّذِينَ آمَنُوا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ .عَلَى الْأَرَائِكِ يَنظُرُونَ . هَلْ ثُوِّبَ الْكُفَّارُ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ . (المطففين-২৯-৩৬) 
অর্থ : যারা অপরাধী তারা মু‘মিনদেরকে উপহাস করতো। তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেতো, তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করতো; আর যখন তারা তাদের আপনজনদের নিকট ফিরে আসতো, তখন উৎফুল্ল হয়ে ফিরতো। আর তাদেরকে দেখলে তারা বলতো, এরা পথভ্রষ্ট। তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি। সুতরাং আজ মু‘মিনগণ উপহাস করবে কাফেরদেরকে নিয়ে, সুসজ্জিত আসনে বসে তারা অবলোকন করবে। কাফেররা তো কেবল তাদের কর্মফলই ভোগ করে থাকে। 
                                                                                                                (মুতাফফিফীন: ২৯-৩৬) 
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,   قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ . (توبة : ৬৫) 
অর্থ: বল! তোমরা কি আল্লাহ্ ্এবং তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ ও উপহাস করছ ? (তাওবা : ৬৫) 
কোন ব্যক্তি ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ ও উপহাস করার কারণে ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার কারণ হচ্ছে-
১. এ ঠাট্টা-বিদ্রƒপ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে ইসলামের উক্ত বিষয়টির সাথে একমত নয়। বিষয়টি সে অপছন্দই করে না শুধু বরং বিষয়টি অস্বীকারও করে। 
২. এর দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান তার কাছে যথার্থ ও সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচিত নয়; বরং অন্য কোন জীবনবিধান আরো বেশি যথার্থ ও উপযুক্ত। 
৩. এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং অন্য কোন জীবনবিধানকে গ্রহণ করে নিয়েছে।