আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুনিয়া উপার্জনের চেয়ে দুষণীয় জিনিশ আর নেই।

img


২০১১ সালের নভেম্বরে একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আল্লামা আহমদ শফীর ( রহ.)। শিক্ষা,সংস্কৃতি,রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে এতোটাই খোলামেলা আলাপ হয়েছিলো, যা সাধারণত অন্য কোনো সাক্ষাৎকারে দেখিনি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা উঠে এসেছিলো। এটি প্রথমে প্রকাশিত হয় মাসিক আল ফারুকে। পরে এর নির্বাচিত অংশ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত জামেয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথের দস্তারবন্দী স্মারকে।
তাঁর চিন্তা ও ভাবধারাকে বুঝতে হলে এ সাক্ষাৎকার সহায়তা করবে বিশেষভাবে।
পড়তে পারেন সেই সাক্ষাত্কার।
‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুনিয়া উপার্জনের চেয়ে দুষণীয় জিনিশ আর নেই।‘
কুতবুল আলম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. 'র রোপিত বৃক্ষটা এখন মহীরুহ। আল্লামা আহমদ শফী রহ. 'র পিতা জনাব বরকত আলী স্বপ্ন দেখতেন সুউচ্চ মিনারের, যার মাথা আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। আর সেই স্বপ্ন বড় চমৎকারভাবে বাস্তব হয়ে উঠেছে। ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সেই শিশুটি জিরি মাদ্রাসা, হাটহাজারী জামিয়া হয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের ইলমী সমুদ্রে অবগাহন করে এখন নিজেই এক সমুদ্র হয়ে আছেন। হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান, হযরত মাওলানা ইব্রাহিম বল‌ইয়াভী, শাইখুল আদব এ'জাজ আলী রহ. 'র একান্ত সেই শাগরিদ আজ সময়ের শায়খুল মাশায়েখে পরিণত হয়েছেন । দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি জামিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহতামিম। সারা বাংলার শ্রেষ্ঠ শাইখুল হাদীস হিসেবে তিনি বরেণ্য। তরিকতের তিনি অবিস্মরনীয় শায়খ। জাতীয় নেতৃত্বে তিনি আশা ও নির্ভরতার প্রদীপ। ইলম, ইরশাদ ও সমাজসংস্কারের মহান কর্মসূচি নিয়ে তিনি গতিমান দেশ-বিদেশে। এই সময়ে এদেশের আহলে ইলম ও আওয়ামুন্নাসের অবিস্মরণীয় রাহবার আল্লামা আহমদ শফীর সাক্ষাৎকার আলো ফেলবে আমাদের চিন্তার দিগন্তে, এমনকি গলি-ঘুপচিতেও।
সাক্ষাৎকারটি নিম্নরূপ:
মুসা আল হাফিজ: কওমি মাদ্রাসা ও প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য কী ?
আল্লামা আহমদ শফী: কওমি মাদ্রাসা যেরকম নযরিয়্যা ও জীবনবোধ তৈরি করে এর সারমর্ম হলো- 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' আর ব্রিটিশ প্রবর্তিত প্রচলিত দুনিয়াবী শিক্ষা যে ধ্যান-ধারণা তৈরি করে এর সারমর্ম হলো 'লা ইলাহা ইল্লাল বাতনু ওয়াল খাহেশাত।' একটার সাথে আরেকটা পার্থক্য ততটুকু, মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে পার্থক্য যতটুকু। একটা থেকে জন্ম নেয় আলেম-ওলামা। আরেকটা থেকে তৈরি হয় দুনিয়া উপার্জনের পন্ডিত।
মুসা আল হাফিজ: দুনিয়া উপার্জন কি দুষণীয়?
আল্লামা আহমদ শফী: আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুনিয়া উপার্জনের চেয়ে দুষণীয় জিনিস আর নেই। দুনিয়া উপার্জন খারাপ আবার ভালো। দ্বীনকে রাহবর বানিয়ে দুনিয়া উপার্জনের পথে এগুলে সেটা ভালো। আর দ্বীনকে দুনিয়ার তাবে বানিয়ে নিলে দুনিয়া উপার্জন ক্ষতিকর।
মুসা আল হাফিজ: মাদ্রাসায় তো দুনিয়াবিহীন দ্বীন আর সাধারণ শিক্ষায় দ্বীনবিহীন দুনিয়া। উভয়টাই তো খারাপ।
আল্লামা আহমদ শফী: দ্বীন মানেই তো ইসলাম। ইসলাম কখনো দুনিয়াবিহীন নয়। দুনিয়ার সমস্ত প্রয়োজন ইসলাম পূরণ করে। জীবনের কোন দিক‌ই ইসলামে অনুপস্থিত নয়‌। মাদ্রাসায় ইসলাম শেখানো হয়। আখলাক শেখানো হয়। মুআমালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি শেখানো হয়। এগুলো তো সবই দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। শরীয়তের অধিকাংশ বিষয়‌ই তো দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। দুনিয়া বাদ দিয়ে তো শরীয়তই পুরা হয় না। অতএব ইসলাম শিক্ষা মানেই দ্বীন-দুনিয়া উভয়ই শিক্ষা। মাদ্রাসায় উভয়টিই আছে। তবে সেখানে দুনিয়া দ্বীনের তাবে। আর জেনারেল শিক্ষা এর উল্টো। সেখানে দ্বীন দুনিয়ার তাবে। মূলত সেখানে দ্বীন বলতে কিছুই নেই। দিন না থাকলে দুনিয়াও ভালোভাবে থাকে না। সেখানে দুনিয়ার চাকচিক্য থাকতে পারে। কিন্তু সত্যিকার সুখ ও সার্থকতা নেই।
মুসা আল হাফিজ: বর্তমানে দুনিয়া তো দ্বীনের তাবেদারী মানছে না ...
আল্লামা আহমদ শফী: মানছে না। মানাতে হবে। এটা না পারলে দুনিয়ার অশান্তি দূর হবে না। অস্থিরতা কমবে না। ভারসাম্য কোথাও থাকবে না। দলিল ও যুক্তির মাধ্যমে আলিমদেরকে একথা দুনিয়াকে বুঝাতে হবে। কাজের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত করতে হবে। মানুষের
জেহেনে ও সমাজে একে প্রতিষ্ঠিথ করতে হবে। কিন্তু আজ অধিকাংশ আলিম এ দায়িত্ব পালন করছে না। তারা যদি আলিমানা গুণসম্পন্ন হতো, তাহলে এ কাজ তারা করতো এবং সফলতা অর্জন করতো।
মুসা আল হাফিজ: আলিমানা গুণ বলতে কী বুঝায়?
আল্লামা আহমদ শফী: শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহির ভাষায় আলিমানা গুণ হল চারটি। ১. ইলম অর্জন করতে থাকা এবং ইলম শিখাতে থাকা। ২. পাঠদানের পূর্বে কিতাব পূর্বাপর পাঠ করা। ৩. তাহরীর ও তাকরির তথা লেখনী ও বয়ানের ক্ষেত্রে সুযোগ্য হওয়া। ৪. মুজাদালাহ তথা ধর্মীয় বিতর্কের ক্ষেত্রে দক্ষ ও বাকপটু হওয়া। এই চার গুণ যদি আলিমের মধ্যে না থাকে, তিনি বিকলাঙ্গ হয়ে যান। তার দ্বারা দ্বীনের খেদমত কম হয়। এইসব গুণের ঘাটতি যতবেশি থাকা হবে , দ্বীনি খেদমতের ক্ষেত্রে ঘাটতিও ততবেশি হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমার মনে হয় এই গুণাবলী অর্জনে আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে কেউ মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হলেই সে আলেম নয়। পড়ার মাধ্যমে যদি তাজকিয়া হয়, তখন সে আলিম। যদি বেআমল থেকে যায়, সে আলিম নয়। অথচ উভয়েই মাদ্রাসায় পড়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত হলো বোলতা এবং মাছির মতো। উভয়েই ফুলের রস আহরণ করে কিন্তু একটির মধ্যে তৈরি হয় বিষ। আরেকটির মধ্যে মধু। অতএব যারা আলেম হতে চায় তাদেরকে প্রকৃত ইলমের অধিকারী হতে হবে।
মুসা আল হাফিজ: প্রকৃত ইলমের পরিচয় কী?
আল্লামা আহমদ শফী: ইলম দুই প্রকার। একটা হলো গোমরাহ করনেওয়ালা ইলম। আরেকটা সুপথ প্রদর্শনকারী ইলম। যে ইলম আসার পর আমিত্ব যায় না , সে ইলম গোমরাহীর ইলম। আমাদের মধ্যে হেদায়েতের ইলম কম। এ কারণেই আলিমে আলিমে অনৈক্য বিভেদ। আমরা একে অন্যকে মেনে নিতে পারি না। ছোট্ট একটি মাদ্রাসায় যান। সেখানেও আলিমে আলিমে বিভেদ। জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যের ক্ষেত্রেও আলিমে আলিমে বিভেদ। আমার মতামত‌ই সঠিক। আমিই নেতা হবার উপযুক্ত। আমি আর আমি, আমি আর আমি। আমি বড় আলিম, আমি বড় পীর, আমি বড় বক্তা, এগুলো এদেশে মহামারী হয়ে উঠেছে। এর ফলে আলিমরা এক হতে পারছেন না। কিছু করতেও পারছেন না।
মুসা আল হাফিজ: কী পারছেন না?
আল্লামা আহমদ শফী: তাগলীবে দ্বীনের কাজ যেভাবে পারা উচিত, সেভাবে পারছেন না। তাবলীগে দ্বীনের কাজও পারছেন না। আলিমরা এক হলে দেশ ও জাতির অবস্থা অন্যরকম হতো।
মুসা আল হাফিজ: আলিমদের ঐক্য না হওয়ার পিছনে আর কী কারণ থাকতে পারে?
আল্লামা আহমদ শফী: ঐক্য হতে হলে ঐক্য কামনা করতে হবে। কেউ কি সত্যিকার অর্থে ঐক্য চাই? আমার সাথে অন্যরা এসে যুক্ত হোক। এটি কি কোনো ঐক্যের কথা? আসল ব্যাপার হলো সত্যিকারের উদ্দেশ্য কি- সেটা? আমাদের মাদানী রহ. গান্ধীজীর সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন, উদ্দেশ্য ঠিক ছিল বলেই পেরেছেন। নিজের মর্যাদা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। আর আমরা নিয়ত খারাপ হওয়ায় নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না। মনে করি মর্যাদা, পদ-প্রতিপত্তি হারিয়ে বসবো। স্বকীয়তা খুইয়ে বসবো। আসলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে যে যাই হই, রাজনীতিতে খুবই অদূরদর্শী।
মুসা আল হাফিজ: তাহলে আলিমরা কি রাজনীতিতে ব্যর্থ?
আল্লামা আহমদ শফী: না, না‌ আলেমরা রাজনীতি করছেন বলেই এ দেশ এখনও ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যায়নি। আলিমরা এদেশের রাজনীতির বিশাল এক প্রভাবক। আমার কথা হলো, তারা প্রভাবক থাকবেন না‌। নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবেন। সে প্রত্যাশা পূরণ করতে তারা ব্যর্থ। অথচ ইসলামী শক্তির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কি কম? এদেশে বামপন্থীগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রক হবার ছল আঁটছে। তারা দেশ-বিদেশি প্রভুদের নিয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে নিজেদের নেটওয়ার্ক। এদেশে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, মিডিয়া, সুশীল সমাজ ইত্যাদিতে তাদের যে প্রভাব ও ক্ষমতা , তার অর্ধেকও কি ইসলামী শক্তির আছে? এমতাবস্থায় আলিমরা শুধু নিজেদের গন্ডিতে বসে বসে খোয়াব দেখলে অচিরেই তারা ব্যর্থ প্রমাণিত হবেন। তাই বলে আমরা হতাশ হচ্ছি না। এ কথাটি প্রমাণিত হয়েছে যে, আলিমদের বাদ দিয়ে এদেশে কোনো রাজনীতি চলবে না। ধর্মনিরপেক্ষ বলে যারা পরিচিত তারা আলিমদেরকে কাছে টানার জন্য চেষ্টা করছে। তারা বুঝছে আলিম-ওলামাদের বিরোধিতা করে জনগণের মন জয় করা কঠিন। এ কারণে শেখ হাসিনা আমার কাছে ওয়াদা করেছিলেন, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য নষ্ট করবেন না। ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না। কুরআন বিরোধী আইন করবেন না। ধর্মীয় ব্যাপারে আলিম-ওলামাদের পরামর্শ মেনে চলবেন। কিন্তু সে ওয়াদা তিনি রাখেননি। রাখতে পারেননি। কারণ তার চারপাশে একদল শয়তান বসে আছে। এরা নাস্তিক, এরা বামপন্থী। আমি শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম এদের ব্যাপারে সতর্ক হবার জন্য। তিনি আমার কথাটিকে মন দিয়ে শুনলেও পরে তা মানতে পারলেন না।
মুসা আল হাফিজ: যেসব আলিম আওয়ামীলীগের সাথে আঁতাত করছেন তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?
আল্লামা আহমদ শফী: তারা ভুল পথে আছেন। তাদের উচিত কেবলা ঠিক করা। নিজেদের সমস্ত কিছু খুইয়ে তারা দেউলিয়া হচ্ছে। কারণ আওয়ামীলীগ স্বার্থ ফুরালে কেটে পড়ার দল।
মুসা আল হাফিজ: আর যারা জামাতে ইসলামীর সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন?
আল্লামা আহমদ শফী: তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামীলীগ স্বার্থ ফুরালে কেটে পড়ে। কিন্তু জামাত স্বার্থ ফুরালে কেটে ফেলে ।মওদুদী জামাতের প্রতি ঘৃণাপোষণ করাকে আমি দ্বীনি গায়রাতের অংশ মনে করি।
মুসা আল হাফিজ: খতমে নবুওতের আন্দোলন এগুচ্ছে না কেন?
আল্লামা আহমদ শফী: হযরত মাওলানা উবায়দুল হক সাহেবের ইন্তেকালের পর এ আন্দোলন স্থিমিত বলা যায়। এ আন্দোলন আমাদের ঈমানের অংশ। এটা কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলন নয়। আমরা খতমে নবুওত রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যারা খতমে নবুওত মানে না তারা মুসলমান নয়। আইনিভাবে এটা নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলমানকে আমরা সঙ্গে পাবো। এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। আমি আলিমদের প্রতি অনুরোধ করি, আপনারা এ আন্দোলনে কোনো ছাড় দেবেন না। জনগণকে সঙ্গে নিন। বিএনপি-আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিন। মানুষকে বোঝাতে থাকুন। যারা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন, প্রত্যেকের উচিত খতমে নবুওতের উপর একজন বক্তা রাখা। ইমাম-খতীবদের উচিত এ বিষয়ে বক্তব্য রাখা। সমস্ত আলিমদের উচিত ঐক্যবদ্ধ হ‌ওয়া। যারা লিখেন, আপনার কোন কলম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি নিয়ে আমরা দৌড়াদৌড়ি করছি। কিন্তু খতমে নবুওত নিয়ে চুপ করে আছি। এটা জাতীয় লজ্জা ও হীনমন্যতার ব্যাপার। উভয়টাই আমাদের দরকার। তার চেয়ে দ্বিতীয়টা আরো বেশি দরকার।
মুসা আল হাফিজ:, কওমি মাদ্রাসার উপর বর্তমানে বহুমুখী হামলা হচ্ছে, এ থেকে উত্তরণের উপায় কি?
আল্লামা আহমদ শফী: কওমি মাদ্রাসার ওপর হামলা আসলে ইসলামের উপর হামলার‌ই অংশ। এ হামলা নতুন নয়। এখন তো শিক্ষানীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার বিশেষত্ব নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত হচ্ছে। একটি শ্রেণী উঠে পড়ে লেগেছে মাদারিসে কওমিয়াকে বিলুপ্ত করে দেয়ার জন্য। বিভিন্ন মিডিয়ায় কওমি মাদ্রাসাকে জঙ্গিবাদ ইত্যাদির জন্য দায়ী করা হচ্ছে। অথচ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ করলে ক‌ওমীওয়ালারাই করেছেন। বলা হচ্ছে এইসব মাদ্রাসা থেকে বিকলাঙ্গ মানুষ তৈরি হয়। যারা জাতির বোঝা। কিন্তু কারা জাতির বোঝা হয়ে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে জাতির ক্ষতি করে চলেছে, দেশের মানুষ জানে। বলা হচ্ছে, কওমী মাদ্রাসা পড়ুয়াদের জাগতিক কোনো জ্ঞান নেই। একথা তারাই বলে যারা জীবনেও কওমি মাদ্রাসার ধারে কাছে আসেনি ।তারা এটা বলে, না জেনে অথবা বিদ্বেষের কারণে। এইভাবে নানারকম অপপ্রচার ও হামলার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসাকে শেষ করা যাবে না। এখন মুসলমানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা থেকে দূরে সরাবার জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও উঠে পড়ে লেগেছে। তারা একের পর এক কৌশল করছে মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ।এদের হামলার গতিপ্রকৃতি বুঝে আমাদের সচেতন হতে হবে। যে রকম হামলা আসছে সে রকম মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। পাশাপাশি এ সম্পর্কে দেশের মানুষকে সজাগ করতে হবে। আরো বেশি মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে হবে। ধর্মীয় জ্ঞান ও নৈতিক চরিত্র শিক্ষার গুরুত্ব মানুষকে বুঝিয়ে সারাদেশে মাদ্রাসার জাল বিছিয়ে দিতে হবে।
মুসা আল হাফিজ : আপনি বললেন, খতমে নবুওত আন্দোলনে বিএনপি-আওয়ামী লীগকে সাথে নিতে। জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিলে সমস্যা? আপনি বললেন, ইসলামী শক্তির ঐক্যের কথা এবং সবার সাথে বেশি সম্পর্কে র কথা। সেখানেও তো জামায়াতের কথা আসে।
আল্লামা আহমদ শফী : দেখেন, আমি কোনো রাজনীতির মানুষ নই। খতমে নবুওত আন্দোলনে জামায়াত থাকবে না, তা তো বলছি না। তারা তো আগেও ছিলো। তাদের অবদান আছে তো পাকিস্তানে।
মুসা আল হাফিজ : জামায়াতে ইসলামীর সাথে এবং আওয়ামীলীগসহ সেক্যুলার কিংবা জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?
আল্লামা আহমদ শফী : রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো না করাই উচিত। আমি মনে করি, যারা বেশি সহায়ক মনে হবে, তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া যায়।
মুসা আল হাফিজ : হেফাজতে ইসলাম নামে আপনার সংগঠন আছে। একই নামে খলীফায়ে মদনী রহ. শায়খে বরুণীর রহ. একটি সংস্থা আছে অনেক আগ থেকে। আপনি কি জানতেন সেই হেফাজত সম্পর্কে?
আল্লামা আহমদ শফী : উনি তো আমার বড় ভাই ছিলেন। লুতফুর রহমান বরুনী রহ.। তার কাজ সিলেটে আর আমার কাজ চট্টগ্রামে। কোনো সমস্যা নেই।