Atiqur Rahman
=====================
(১) রমাদন মাসে দ্বীনি হুকুম-আহকাম পালনের এক মনোরম আবহাওয়া তৈরী হয়। রমাদন-পরবর্তীতে সেটি মিলিয়ে যায়। এজন্য আমাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্ভন করা জরুরী। রমাদনে তাকওয়া প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আমরা যে আল্লাহ-ভীতি অর্জন করেছি তা যেন মিলিয়ে না যায়। যেভাবে আমরা রমাদনে আল্লাহ রব্বুল আ'লামিনকে ভয় করে যাবতীয় হারাম থেকে দূরে থেকেছি, তা যেন আমরা আবার শুরু করে না ফেলি। আমরা যেন রমাদনের ন্যায় ঠিক একইভাবে আল্লাহকে ভয় করতে থাকি। তাকওয়াপূর্ণ জীবনকে বেছে নেই। একজন মুমিনের জীবন চলার পথে সর্বোত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি।
(২) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদীছে রাসূল ﷺ বলেন, যে আমল নিয়মিত করা হয় সেটা আল্লাহ তা'আলার নিকট অধিক প্রিয়। রাসূল ﷺ যখন মেরাজে জান্নাত ও জাহান্নাম অবলোকন করেন তখন তিনি জান্নাতে হজরত বেলাল রাঃ এর পায়ের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। যে আমলের কারণে বেলাল রাঃ এ মর্যাদা অর্জন করেছিলেন তা ছিল খুব সাধারণ এবং ছোট আমল। এ আমলখানি ছিল: তিনি যখন ওযু বা পবিত্রতা অর্জন করতেন তখনই দু'রাকআত নামাজ আদায় করে নিতেন। রমাদনে আমাদের যে আমলগুলো বাড়তি হিসেবে পালনের তৌফিক হয়েছিল, আমরা যেন তা ছেড়ে না দেই। কোন আমলকেই ছোট ভাবার সুযোগ নেই।
(৩) ঈমানকে তরতাজা রাখার অন্যতম এক উপায় হলো উত্তম মানুষের সোহবত গ্রহণ করা। উত্তম মানুষকে দেখে অন্তরে আল্লাহর ভয় তৈরী হয়, আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। জনৈক সালাফ যখনই ঈমানের ঘাটতি অনুভব করতেন তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ওস্তাদের সাক্ষাত গ্রহণ করতেন। এতে করে তাঁর আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হতো, ঈমানের ঘাটতি দূর হতো। আমাদের এমন মানুষের সোহবত পরিহার করা উচিত যাদের সোহবত আমাদের পশ্চাতে নিয়ে যায়, আমলের প্রতি অনীহা তৈরী করে।
(৪) আল্লাহ তা'আলার সাহায্য ব্যতিরেকে নেক আমল করার তৌফিক হয়না, হয়না গোণা থেকে নিজেদের বাঁচানো। আমাদের হেদায়েত আল্লাহ রব্বুল আ'লামিনের হাতে। উম্মে সালামা রাঃ আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদীছে এসেছে রাসূল ﷺ যখন তাঁর ঘরে অবস্থান করতেন তিনি ﷺ বেশী বেশী এ দোয়া করতেন " ইয়া মুকাল্লিবুল কুলুবি সাব্বিত কুলুবানা আ'লা দ্বীনিকা'। এর অর্থঃ হে অন্তর উলোটপালটকারী, আমাদেরকে আপনার দ্বীনের উপর অটুট রাখুন। রমাদন পরবর্তী সময়ে এ দোয়া আমরা যেন বেশী বেশী করি। যখন সিজদারত থাকি তখন যেন এ দোয়া অধিকহারে করি।
(৫) ঈমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল একজন মুমিনের অবসর নেয়ার সময় কখন। ঈমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ বলেন, একজন মুমিনের জন্য অবসর নেয়ার সময় তখনই যখন সে জান্নাতের মাটিতে নিজ পা রাখবে। রমাদন শেষ হয়ে গেলেও আমাদের অবসর নেয়ার কোন সুযোগ নেই। জান্নাতে প্রবেশ অবধি আমাদের ঈমানের উপর দৃঢ় থাকতে হবে, আমলে মশগুল থাকতে হবে।
অনেকের এমন ধারণা হতে পারে, রমাদন মাস অতিক্রম হয়ে গেছে অতএব আল্লাহ তা'আলার মাগফেরাত অর্জনের সম্ভবনা কমে গেছে। বিষয়টি এমন নয়। আল্লাহর মাগফেরাতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি। বান্দা যে কোন সময় তওবার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার মাগফেরাত হাছিল করতে পারে। রমাদন পরবর্তী শাওয়ালের ছয় রোজার মাধ্যমে সে সারা বছর রোজা পালনের সওয়াব হাছিল করতে পারে। মুসলিমের এক হাদীছে এসেছে যে রমযান -পরবর্তী শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখলো, সে যেন জীবনভর রোযা রাখলো। প্রতি সোমবার ও মঙ্গলবার রোজা রেখে আল্লাহর মাগফেরাত পাওয়া যেতে পারে। কেননা এসময় জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।
যারা রমাদনে ইতেকাফ করতে পারেনি। তাদের জন্যও রয়েছে সুসংসবাদ। যে একজন মুসলমানের প্রয়োজন পূরণ করলো সে মসজিদে নববীতে একমাস ইতেকাফ করা অপেক্ষা অধিক সওয়াব পেলো। অতএব আসুন আশেপাশের মুসলমান ভাই-বোনদের প্রয়োজনগুলো পূরণে আত্মনিয়োগ করি।
ছবিঃ উজবেকিস্তানের একটি মনোরম মাসজিদ।