আব্দুল্লাহ বিন মস্তোফা
এটা শুধু একটা মাহফিল নয়, এটা শিরকের বিরুদ্ধে এক তাউহিদী বিপ্লব। এটা আলেম-উলামা, হক্কানী পীর- মাশায়েখ, তাবলীগসহ সকল দল ও সিলসিলার ঐক্যের এক সোনালী প্লাটফর্ম। এটা বিদয়াতের বিরুদ্ধে সুন্নাতের কালজয়ী এক সংগ্রাম। বাতিলের বিরুদ্ধে হকের মহা এক প্রলয়। এটা অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের বিজয়। এটা শত বছরের কুফুরী মেলার বিকল্প তিনদিনের ঈমানী ইজতেমা। এটা গানের বিকল্প এক কুরআনের মজমা।
যেই জমিনে শত শত বছর ধরে তথাকথিত গাজী কালুর গর্তে মণে মণে দুধ ঢেলে কাদার সাথে গুলিয়ে পান করা হতো। শেফার জন্য, বিবাহের জন্য, সন্তান লাভের জন্য, সফলতার জন্য চাকরি বা ব্যবসায়, সেখানে আজ রবের কাছে ফরিয়াদ হয়, সকাল-সন্ধায়। যেখানে বসতো জুয়ার আসর, সেখানে আজ বসে দুআর আসর। কুরআন-হাদীসের বয়ানের মজলিস।
তাহাজ্জুদের মাধ্যমে শুরু হয় প্রতি দিনের কর্মসূচি। ফজর থেকে শুরু হয় দেশবরেণ্য আলেমদের ঋদয়ছোঁয়া বয়ান। চলে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত। মাঝে মাঝে চলে অযু-নামাযের বাস্তব প্রশিক্ষণ। আরো থাকে কুরআন ও আযান-একামাতসহ দুআ-দরুদের মশক এবং দাওয়াতুল হকের আদলে সুন্নাতের মুযাকারা।
তাবলীগের আদলে প্রায় হাজার-বারোশ শ্রতা আসেন বেডিংসহ তিনদিনের জন্য জামায়াতবন্দি হয়ে।
জামায়াতবন্দী নন এমন শ্রতা আসেন হাজার -হাজার ।
প্রায় ২ কিমি এলাকা জুড়ে মাইক সেট করা হয় । মাহফিলকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় অন্য রকম এক আনন্দের বাতাস বইতে থাকে । ঘরে ঘরে আত্মীয় স্বজনের শুভাগমন চোখে পড়ার মতো। এ যেন আরেকটি ঈদ-উৎসব।
বাউলদের সেই সম্মেলন গত চারবছর ধরে গোপালগঞ্জ- মাদারীপুর- ফরিদপুরের হাজার হাজার আলেমদের মহা সম্মেলন। এবছর ৫ম মাহফিল। প্রথম বছর (২০১৫) মাহফিল করতে আলেমদের যে কী পরিমাণ মেহনত ও কুরবানী করতে হয়েছে, তা বলার না। ঐ মাঠের আশপাশের গ্রামগুলোর নয়টি মসজিদে আমরা ( আমি অধম, মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা তহা, মাওলানা ওমর ফারুক, মুকাররাম হুসাইন, মাওলানা অহীদুজ্জামান, মাওলানা রিয়াজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রহমান সহ মুকসুদপুর উলামা কল্যাণ পরিষদের সকল সদস্য ও আশপাশ এলাকার প্রায় সকল মাদ্রাসার মুহতামিম ওশিক্ষকগণ) নিজ উদ্যোগে ফ্রি ফ্রি মাহফিল করেছি। মেলা কেন্দ্রিক যাবতীয় বে-শরা বা অবৈধ কার্যকলাপ সম্পর্কে বয়ান করেছি। মেলার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য তথাকথিত "বারো আউলিয়ার" বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বুঝিয়েছি। মাদরাসায় মাদ্রাসায় সফর করেছি। সবার পরামর্শে তিনদিন ব্যাপী ইজতেমার ফয়সালা হলো। পোস্টার ছাপানো হলো , ছড়িয়ে পড়লো মেলা নয় , গাজীর মাঠে এবার মাহফিল হবে। কিন্তু এমন সময় সামনে আসলো বড় এক বাধা। ওসির নিকট শত্রুপক্ষের অভিযোগ এটা হেফাজত ও জামায়াতের সমাবেশ। পুলিশ আমাদের ডাকলো। উদ্দেশ্য মাহফিল হতে দিবে না। পড়ে গেলাম মহা বিপদে। পরামর্শভিত্তিক এলাকার আশপাশের তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় নেতা-গণ্যমান্য লোক ও উলামাদের বিশাল এক জামায়াত নিয়ে হাজির হলাম পুলিশ ফাঁড়িতে । ওসি সবার আবেদন শুনে অনুমতি দিলেন। এমনকি এক প্লাটুন পুলিশ ও দেওয়ার আশ্বাস দিলেন।
সালাতুল হাজাহ নামাজ ও নফল রোযার মাধ্যমে রবের সাহায্যকে সম্বল করে সামনে চলতে লাগলাম। আলহামদুলিল্লাহ কোনো ঝামেলা ছাড়াই সমাপ্ত হলো প্রথম মাহফিল। যেটার বাস্তবায়নে মুকসুদপুর উলামা কল্যাণ পরিষদের সাথে যারপর নেই মেহনত করেছেন গোহালা, রাগদী, ননীক্ষীরের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানগণ । তবে স্থানীয় লোকদের সহযোগিতা ছিল চাওয়ার ও উর্ধ্বে। তন্মধ্যে জনাব হায়দার মোল্লা, হেমায়েত মাতুব্বার, মনা ম্যানেজার ও সরো মোল্লার কথা না বললেই নয়। এই মহত উদ্যোগ যেন আল্লাহ কবুল করেন। সেই দুআ কামনা সবার কাছে। আর সবার প্রতি রইল এই শিরক বিরোধী জিহাদে শরীক হওয়ার আহ্বান ।